ডিসি সুলতানা ও ৩ ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট আদালত




কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীননির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ও তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানের করা মামলার অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত। মামলার অগ্রগতি জানতে কেস ডায়েরি (সিডি) তলবের পর তা পর্যালোচনা করে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেস ডায়েরি নিয়ে আদালতে হাজির হলে বিচারক মোশাররফ হোসেন তা পর্যালোচনা করে তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আদালতের সাধারণ নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা (জিআরও) আমজাদ হোসেন ও আদালতে নিযুক্ত সাংবাদিক আরিফের পক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে, সাংবাদিক আরিফের পক্ষে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলুর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট মামলার কেস ডায়েরি তলব করেন আদালত। আজ সেটি আদালতের নজরে আনেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)।

সংবাদ প্রকাশের জেরে এ বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে চাওয়া এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল রিগানকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। আরিফুল তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ও তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাত ৩৫/৪০ জনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ৩১ মার্চ সেই মামলা রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। মামলার নম্বর-২৪, জি আর নম্বর-৮৩/২০২০ (কুড়ি)।

আরিফুল ইসলামের আইজীবী মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ প্রবিধানমালা ১৯৪৩ এর ২১ প্রবিধানের অধীনে মামলার অগ্রগতি জানতে কেস ডায়েরি তলবের আবেদনটি দাখিল করা হয়। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা আজ কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করেন। আদালত তা পর্যালোচনা করে তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

জিআরও আমজাদ হোসেন জানান, আগামী ২৯ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নামানুসারে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও নানা অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধান করায় গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে তাকে ধরে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। পরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। তার বাড়িতে আধা বোতল মদ এবং গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। মধ্যরাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমে এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় পরদিন ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, যার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।