লালমনিরহাটে তিস্তা এখনও বিপৎসীমার ওপরে

তিস্তা ব্যারাজ (ফাইল ছবি)

লালমনিরহাটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টার পরেও বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল তিস্তা নদীর পানি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।  এ কারণে তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকাল তিনটায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহ ছিল কিন্তু একইদিন সন্ধ্যায় হঠাৎই তিস্তার পানিপ্রবাহ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় পানিপ্রবাহ বেড়ে রাত ১২টায় বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার পর থেকে পানিপ্রবাহ কমতে শুরু করে। এরপরও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ১৫ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ কমে বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী এএসএম আমিনুর রশীদ।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী(পানি পরিমাপক) এএসএম আমিনুর রশীদ বলেন, ‘ভারতের সিকিম, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং সহ আশপাশে ভারী বর্ষণ ও উজানে ঢলের কারণে এ পরিস্থিতি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর ভারতের গজল ডোবা ব্যারাজের উজানের সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। এর ওপর নির্ভর করছে পানিপ্রবাহ কী অবস্থায় থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর অঞ্চলে গত এক সপ্তাহ থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তা নদী তীরবর্তী অঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ কারণে জনজীবনে কিছুটা দুর্ভোগ বেড়েছে।

গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতে শাকসবজি ক্ষেত ও বীজতলার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, কৃষির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তথ্য আসার পর বিস্তারিত জানানো হবে। 

হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, ‘হঠাৎ তিস্তায় বন্যা দেখা দেওয়ায় অনেক মানুষের বাড়ী পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

এদিকে, এ আকস্মিক বন্যায় কবলিতদের সুরক্ষায় জেলা প্রশাসন থেকে ১১৫ মে.টন জিআর চাল ও ৮১০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। তিনি নিজে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের চরগোবর্ধন ও আশেপাশের দুর্গত এলাকাগুলোতে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এসময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজনকে কোমর পানি ভেঙে সরকারি ত্রাণসামগ্রী নিতে দেখা গেছে।