ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাল্টা বাগানে সবুজ হাসি!




মাল্টা১লিচু-কাঁঠাল-পেয়ারার পর ফল সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, আখাউড়া এবং কসবা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে এবার সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। শুরুতে মাল্টা চাষ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় এলাকার অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগ বলছে আগামী দিনে উঁচু পাহাড়ি ভূমি এবং খালি জমিতে মাল্টার আবাদ বৃদ্ধিতে কাজ চলছে।

কৃষি বিভাগ ও চাষিরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী বিজয়নগর উপজেলার নোয়াবাদী, মেরশানী, বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুর এবং আখাউপজেলার আজমপুর, আমুদাবাদ, রাজাপুরসহ কসবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিটি বাগানে এখন থোকায় থোকায় মাল্টার সমারোহ। গত ২০১৬ সালে কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় প্রথমবারের মতো চাষিরা বারি-১ ও বারি-২ জাতের মালটা গাছের চারা লাগিয়েছিলেন। শুরুতে অপরিচিত এই ফলটির চাষাবাদ নিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও, খরচ কম আর উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় এখন মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন তারা।

মাল্টা২বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়নের মিরাসানী গ্রামের বাগান মালিক মো. সোহাগ ভুইয়া জানান, প্রায় এক একর জমিতে তিনি মাল্টা বাগান করেছেন। গতবারের চেয়ে এবার মাল্টার ফলন বেশি হয়েছে। মাল্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় অন্যান্য সবজি থেকে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন তিনি।

সোহাগ আরও জানান, তার বাগানটিতে ১২০টি গাছ রয়েছে। বাগান করতে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম বছরে প্রায় দুই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এবার মাল্টার ফলন আরও ভালো হয়েছে, বেশি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সোহাগ বলেন, আমার দেখাদেখি অনেকেই পেয়ারা, বেগুনের আবাদ কমিয়ে মাল্টা বাগানের দিকে ঝুঁকেছে।

মাল্টা৩এলাকার অপর বাগান মালিক সাজু ভূইয়া বলেন, আমার এলাকার মাটি পাহাড়ি লাল মাটি হওয়ায় মাল্টা চাষের জন্যে বেশ উপযোগী। এলাকার কৃষকদের কাছে নতুন ফল হিসেবে পরিচিত মাল্টার এবার ফলন ভালো হয়েছে, বিক্রিও বেশ ভালো। বর্তমানে বাগান থেকে প্রতি কেজি মাল্টা ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। কুমিল্লা, নরসিংদী ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারেরা এসে বাগান থেকে সরাসরি মাল্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে এ বছর মাল্টার ফলন ভালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় আগামী দিনে পতিত (খালি) জমিতে মাল্টা চাষের আগ্রহের কথা জানান এলাকার অন্যান্য কৃষকেরা।

বিজয়নগর সিংগারবিল এলাকার ফলচাষি কৃষক মো. আবু ছালেহ বলেন, আমাদের বিজয়নগরে এত সুন্দর মাল্টার আবাদ হবে, আমরা চিন্তাও করিনি। বর্তমানে আমাদের এলাকায় মাল্টা বাগানে ফলন ভালো হওয়ায় আমার মতো অনেক কৃষকের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা আরও বেশি বেশি বাগান করতে পারবো।

মাল্টা চাষে আগ্রহী অপর কৃষক মো. কুদ্দুস মিয়া জানান, সোহাগের মাল্টা বাগান দেখে আমরাও আগ্রহী হয়েছি। এই এলাকার মাটি মাল্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী বলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তাই আমারা অনেকেই এখন মাল্টা বাগান করার কথা ভাবছি।

মাল্টা৪ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম ভূইয়া জানান, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সাইট্রাস ভিলেজ প্রজেক্টের আওতায় কৃষকদের বিনামূল্যে মাল্টার চারাসহ কৃষি উপকরণ বিতরন করা হয়। যা দেখে ওই এলাকার কৃষকেরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। বিজয়নগর এলাকার আবহাওয়া ভালো থাকায় মাল্টা চাষিরা এ বছর অনেক লাভবান হবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার জানান, এ বছর বিজয়নগর ,আখাউড়া কসবাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাল্টার ভালো ফলন হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬৬০টি বসতবাড়ি ও ১৯৮ ব্লক বাগানসহ মোট এক হাজার ৮৮০টি বাগানে মাল্টার আবাদ করা হয়। আবাদ হওয়া বাগান থেকে মোট ১৭ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা।