আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘রিফাত ফরাজী, রাব্বি আকন, সিফাত, টিকটক হৃদয়, মো. হাসান ও মিন্নি রিফাত শরীফকে হত্যার অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ঘটনার তারিখ, সময় ও স্থানে এই মামলার ঘটনা ঘটাইয়া তাহাকে খুন করেন। যা পেনাল কোডের ৩০২ তৎসহ পঠিত ৩৪ ধারার অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিয়াছে মর্মে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হইয়াছে।’
আদালত বলেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি মিলিয়া কোনও অপরাধমূলক কাজ করিলে সেই অপরাধের জন্য তাহাদের প্রত্যেককে সমানভাবে দায়ী করা হইবে। সেই কারণেই দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সকল আসামি সমানভাবে অপরাধী।’
মিন্নি প্রসঙ্গে বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেছেন, আসামি মিন্নি এই মামলার ঘটনার মূল পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা (মাস্টারমাইন্ড)। তার কারণেই রিফাত শরীফকে খুন হতে হয়েছে। তার মা-বাবাকে পুত্রশূন্য হতে হয়েছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হইলে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া তার (মিন্নির) সমবয়সী মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এই মামলার তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে বন্ড বাহিনী কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। ওই হত্যাকাণ্ড সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেখানে নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে তার বাহিনী প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকেলেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ঘটনার পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা মো. আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ একে একে গ্রেফতার করেন এজাহারভুক্ত আসামিদের। রিফাতের ওপর হামলার ছয়দিন পর ২ জুলাই ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন এ মামলার আলোচিত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।
রিফাত হত্যাকাণ্ডের দুই মাস ছয়দিন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক।
প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচারিক কার্যক্রম শুরু জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চার্জ গঠন করেন। গত ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্নের মধ্য দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করে আদালত। গত ১৬ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষ হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন, রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।