রিফাত হত্যা: অপ্রাপ্তবয়স্ক ৫ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন

রিফাতবরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত (রিফাত শরীফ) হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ৫ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন আইনজীবীরা। বুধবার (৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আসামিদের উপস্থিতিতে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমানের আদালতে আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সকালে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার জামিনে থাকা ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত হয়। এরপর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় অন্য ৬ আসামিকে। পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু করেন বরগুনা শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। প্রথমে রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের মধ্যে ১ নম্বর আসামি রিশান ফরাজীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থান করেন তার আইনজীবী সোহরাব হোসেন মামুন ফরাজী। প্রায় ৪০ মিনিট বক্তব্যে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগ খণ্ডন করে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্য শেষে শিশু আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, আবু আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান, আরিয়ান শ্রাবন এবং রাতুল সিকদারের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ খণ্ডন করে পর্যায়ক্রমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাড. মো. শাহজাহান।

আসামি পক্ষের আইনজীবী সোহরাব হোসেন মামুন ফরাজী বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ খণ্ডন করে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। আশা করছি আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবো।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আগামী রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্য আসামিদের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পরে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বক্তব্য খণ্ডন করে বক্তব্য রাখবে। এরপর আদালত মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন।

রিফাত হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলো মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ্ ওরফে রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ্ ওরফে অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), মো. নাইম (১৭), মো. তানভীর হোসেন (১৭), মো. নাজমুল হাসান (১৪), মো. রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫), রাতুল শিকদার জয় (১৬), মো. আরিয়ান হোসেন শ্রাবন (১৬)।

গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। ওই হত্যাকাণ্ড সারাদেশ নাড়িয়ে দিয়েছিলো। কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন রিফাত।

ঘটনার পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা মো. আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ একে একে গ্রেফতার করেন এজাহারভুক্ত আসামিদের। রিফাতের ওপর হামলার ছয়দিন পর ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মামলার আলোচিত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।

রিফাত হত্যাকাণ্ডের দুই মাস ছয়দিন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।

৩০ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ৬ প্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলো রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।

আরও পড়ুন:

রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসির রায়
রিফাত হত্যা মামলার আদ্যোপান্ত

রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির যুক্তিতর্ক শুরু

মিন্নিই রিফাত হত্যা পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড: আদালতের পর্যবেক্ষণ