প্রেমিকদের সহায়তায় ছেলেকে হত্যা, মাসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন




কারাদণ্ডবরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট থানা এলাকায় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে শিশুপুত্র রনি (১১) হত্যা মামলায় মাসহ তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে জননিরাপত্তা অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম শহিদ আহমেদ দুই আসামির উপস্থিতিতে ওই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত কনা বেগম কাজীরহাট থানা এলাকার মামলার বাদী পশ্চিম রতনপুরের লকিতুল্লাহ দুয়ারীর স্ত্রী ও একই এলাকার মতলেব নলির মেয়ে। তার সঙ্গে সম্পর্কিত দুই জন হলো নুরুল ইসলাম নলির ছেলে রুহুল আমিন নলি ও জাকির নলির ছেলে শাহীন নলি। আসামি কনা বেগম ও রুহুল আমিন নলি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লস্কর নুরুল হক জানান, ২০০০ সালের মার্চ মাসে লকিতুল্লাহ দুয়ারীর সঙ্গে কনা বেগমের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ১১ বছর বয়সের ছেলে রনি ও ৩ বছর বয়সের মেয়ে সুমাইয়া রয়েছে। কাজের প্রয়োজনে লকিতুল্লাহ চট্টগ্রাম গেলে স্ত্রী কনা বেগম তার চাচাতো ভাই শাহীন নলির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

তাদের এ সম্পর্কের খবর একই বাড়ির রুহুল আমিন নলি দেখে ফেলার পর সেও কনার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এসব ঘটনায় রনি তার বাবাকে ফোন করে শাহীনকে বাসায় আসতে বারণ করতে বলে। পাশাপাশি মায়ের কর্মকাণ্ড স্বজনদেরও জানায়। এসব ঘটনায় রনির ওপর ক্ষিপ্ত হয় কনা বেগম।

ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাহীন নলি ও রুহুল আমিন কনার বাসায় যায়। সেখানে তাদের সঙ্গে মাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে রনি। পরে সে চিৎকার করে বাবাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে কনা বেগম ছেলেকে খাটের ওপর চেপে ধরে। এ সময় শাহীন রশি দিয়ে রনির গলায় ফাঁস দেয় এবং রুহুল আমিন তার হাত-পা চেপে ধরে। পরে রনি নিস্তেজ হয়ে পড়লে শাহীন ও রুহুল আমিন দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পরে কনা বেগম ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রনিকে সাপে কেটেছে বলে অপপ্রচার চালায়।

এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেহেন্দীগঞ্জ থানায় নিহতের বাবা লকিতুল্লাহ দুয়ারী অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ১৯ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই নজরুল ইসলাম ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কনা বেগমসহ তিন জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন। ট্রাইব্যুনাল ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে পলাতক আসামি শাহীন নলির বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন আদালত।