মামলার বিবরণে জানা যায়, গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার দত্তের বাজার বিরুই নদীরপাড় এলাকায় মৃত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হারাধন সিংহের তিন ভাই কালিপদ সিংহ, পরিতোষ চন্দ্র সিংহ ও শেখর সিংহের পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন। কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের পাঁয়তারা করে আসছিল প্রতিবেশী বিএনপি নেতা আলাল উদ্দিন ও জামাত নেতা গোলাম মোস্তফার পরিবারের সদস্যরা। এর পাশাপাশি তারা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করলে প্রতিবাদ করতো এই হিন্দু পরিবাটি। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরই জেরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় আলাল উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, শহিদুল্লাহ, আসাদুল্লাহ, একলাস উদ্দিন, তাফিজ উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন, নিজাম উদ্দিন, নবি হোসেন, মফিজ উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আওয়ালসহ ১৪-১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল রামদা, লাঠিসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে ওই পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে সদস্যদের মারধরসহ মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। আশপাশের লোকজনের খবরে পুলিশ এসে রক্তাক্ত অবস্থায় গুরুতর আহত পরিতোষ চন্দ্র সিংহ, শেখর চন্দ্র সিংহ ও দীপা রানী সিংহকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় হামলাকারী প্রতিবেশী নিজাম উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি করে রক্তমাখা একটি রামদা ও একটি লাঠি উদ্ধার করে পুলিশ। হামলার ঘটনায় পরের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর পরিতোষ চন্দ্র সিংহের স্ত্রী দীপা রানী সিংহ বাদী হয়ে পাগলা থানায় মামলা দায়ের করেন।
গুরুতর আহত পরিতোষ চন্দ্র সিংহ বলেন, ‘এর আগেও এই সন্ত্রাসীরা নির্যাতন করে আরও দুটি হিন্দু পরিবারকে এলাকাছাড়া করেছে। উচ্ছেদ হওয়া অশিনী কুমার দেবনাথ ও গুরুপদ সিংহের পরিবারের জমিজমা আলাল-মোস্তফা গংরা ভোগ-দখল করছে। আমাদের মতো নিরীহ পরিবারকেও উচ্ছেদ করতে হামলা চালানো হয়েছে।’ আসামিদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানোর কারণে আসন্ন দুর্গা পূজা করা হবে না জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী গৃহিণী পপি আক্তার বলেন, ‘হিন্দু পরিবারটি আওয়ামী লীগ পন্থী। বিএনপি-জামাতপন্থী আলাল-মোস্তফা গংরা প্রায়ই আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করতো। এর প্রতিবাদ করতো পরিতোষ পরিবার। এছাড়া জমি নিয়েও ছিল দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এসব কারণে এই হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমরা কেউ তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার সাহস পাইনি।’
দত্তের বাজার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হাফিজ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে নানা গুঞ্জন রয়েছে। ন্যায়বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
আসামি গ্রেফতার করতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে পাগলা থানার ওসি শাহিনুজ্জামান খান জানান, আসামিরা এলাকায় না থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভুক্তভোগী পরিবার বাড়িঘরে আসলে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল জানান, হামলাকারী জামাত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে। হিন্দু পরিবারকে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।