পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে গেলে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। কোনও রকম সামাজিক দূরত্বের বালাই নাই। দুই-চার জনের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বেশিরভাগেরই মুখে ছিল না মাস্ক। প্রতি ডাক্তারের কক্ষের সামনে লোকজনের ঠাসাঠাসি ছিল। চিকিৎসা নিতে আসা নান্টু নামে একজন জানান, করোনা শুরুর প্রথম দিকে ডাক্তাররা দূর থেকে রোগী দেখতেন, এখন প্রায় আগের মতো (করোনার আগে যে রকম রোগী দেখতেন) রোগী দেখছেন তারা।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ মঞ্জুয়ারা জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকা ২১৯ জনের মধ্যে ২১৮ জন সুস্থ হয়েছেন। গেল ২২ সেপ্টেম্বর ভান্ডারিয়ার একজন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি আছেন।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহম্মাদ আল মুজাহিদ জানান, মাস্ক পরার বিষয়ে মানুষ সচেতন না। মাস্ক না পরার কারণে অনেককে জরিমানা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান জানান, নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে, পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা জানান, মানুষ সচেতন না। আগে জরিমানা করা হয়েছে। এখন সচেতনামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সাবান কেনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক লাখ ৭৪ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এ টাকা দিয়ে শিগগিরই মালামাল কেনা হবে।
পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান, করোনা পরিস্থিতি অনেকদিন বিরাজ করার কারণে মানুষের মধ্যে সহনীয় প্রভাব চলে এসেছে। যে কারণে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষিত ও সচেতন মহলের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, তারা করোনার সেকেন্ড ওয়েভ ফিল করছেন। ১১ অক্টোবর রবিবার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় করোনার সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মাস্ক না পরার কারণে এর আগে আমরা নিয়মিত মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করতাম। সেকেন্ড ওয়েভকে সামনে রেখে আমরা এ বিষয়ে নতুন করে আইন প্রয়োগ করা শুরু করবো।
অনেক সময় সভামঞ্চে থাকা অতিথিদের মধ্যে অনেককে মাস্ক পরতে দেখা যায় না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষিত সচেতনদের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তাদের মধ্যে আরও সচেতন হতে হবে।
পিরোজপুরের সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকি জানান, এখন করোনার প্রভাব কম। আগের চেয়ে স্যাম্পল কম। সিম্পটম ছাড়া তো স্যাম্পল হয় না। মানুষের মধ্যে ধারণা হয়েছে করোনা চলে যাচ্ছে। এ কারণে মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে না।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তার-নার্সদের ব্যাবহারের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী রয়েছে। জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালগুলোর জন্য হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা পাওয়া গেছে। পিরোজপুর জেলা পরিষদ থেকে এগুলো দিয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন না থাকার কারণে এগুলো ব্যাবহার উপযোগী করা যাচ্ছে না। পিরোজপুর ও ভান্ডারিয়ায় চারটি হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা লাগানোর জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর তিন কোটি ২৭ লাখ টাকার প্রাক্কলন তৈরি করেছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করে তারা সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করে দিবে। তখন এগুলো ব্যবহার করা যাবে। সেকেন্ড ওয়েভ ঠেকাতে তিনি মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।