চ্যালেঞ্জিং হলেও চিংড়ি চাষের আগ্রহ বাড়ছে রাজশাহীতে

গলদা চিংড়িরাজশাহীতে মিঠা বা স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এ অঞ্চলে মিঠা পানিতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম গলদা চিংড়ি চাষে সফলতায় সম্ভাবনার কথাও বলছেন মৎস্য গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের মধ্যে তাজা মাছের ক্ষেত্রে রাজশাহী শীর্ষে অবস্থান করছে। সফলভাবে গলদা চিংড়ি উৎপাদন করতে পারলে রাজশাহী অঞ্চল আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। তবে চিংড়ি চাষে লার্ভা উৎপাদন ও তাপমাত্রাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা।

গলদা চিংড়ি চাষের এমন সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী মৎস্য অফিস গলদা চিংড়ির লার্ভা উৎপাদন শুরু করে। তবে দুই বছর চেষ্টা করে সফলতা না পাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর লার্ভা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছে মৎস্য অফিস। 

রাজশাহী মৎস্য অফিসের ফিস সিড ম্যাল্টিপুলেশন ফার্ম ম্যানেজার ড. জিন্নাত আরা রোকেয়া চৌধুরী জানান, রাজশাহীতে চিংড়ি চাষের ভালো সম্ভাবনা আছে। তবে চিংড়ির লার্ভা উৎপাদন অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। লার্ভাকে সহজলভ্য করা গেলে চিংড়ি চাষের মধ্য দিয়ে রাজশাহী আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।গলদা চিংড়ির লার্ভা

তিনি জানান, গলদা চিংড়ির ডিম সংগ্রহ থেকে শুরু করে পুরো নার্সিং প্রক্রিয়ায় বায়ো-সুরক্ষা বজায় রাখতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ডিম থেকে লার্ভা পাওয়া যায়। লার্ভা থেকে পোস্ট লার্ভা পর্যায়ে আসতে ১১টা স্টেপ পার করতে হয়। এ সময় ভারসাম্যযুক্ত খাদ্য, তাপমাত্রা, বায়ুচালনা এবং উপযুক্ত জলের গুণমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। লার্ভা উৎপাদনে খাবারের ভারসাম্যটাও অত্যন্ত সুক্ষ্মতার সঙ্গে করা হয়। এক্ষেত্রে খাবারের ব্যয়টাও বেশি। এখানে তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হয়। এর কম বা বেশি তাপমাত্রা হলেই লার্ভার মৃত্যু হার বাড়ে।

তিনি আরও জানান, তারা দেড় বিঘার মতো জমিতে গলদা হ্যাচারিতে লার্ভা উৎপাদন করছেন। সেখানে প্রায় এক লাখ লার্ভা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ডিম থেকে পোস্ট লার্ভা পর্যায়ে আসতে প্রায় দুই মাস পরিচর্যা করতে হয়। লার্ভা পোস্ট লার্ভায় রূপান্তরিত হলে এটা চাষিদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এই লার্ভা তারা মে-জুন মাসের দিকে কৃষকদের সরবরাহ করে থাকেন। তারা এবছর একটি লার্ভা এক টাকা দরে চাষিদের কাছে সরবরাহ করেছেন।

তিনি জানান, তারা মার্চ মাস থেকে লার্ভা উৎপাদনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। প্রথম পর্যায়ে পিরোজপুরের পচা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে ও কক্সবাজার থেকে নোনা পানি সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। নোনা পানি ছাড়া লার্ভা উৎপাদন সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। 

এই কর্মকর্তা আরও জানান, রাজশাহীতে মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে অপার সম্ভাবনা আছে। তবে লার্ভা উৎপাদন অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রে চাষিদের আগ্রহ আছে। লার্ভা পেলে চাষিরা ভালো করবে। কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে লার্ভা উৎপাদন বড় চ্যালেঞ্জ হওয়ায় তারা সরকারি উদ্যোগে কাজটি করেছেন। এবছর সফলতাও পেয়েছেন। ভবিষ্যতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চান তিনি। 

জিন্নাত আরা রোকেয়া চৌধুরী জানান, রাজশাহীতে মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে সম্ভাবনা থাকলেও শুধু চিংড়ি চাষে তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ মিঠা পানিতে চিংড়ি লার্ভা মৃত্যুহারটা বেশি। পোস্ট লার্ভা পুকুরে ছাড়ার পর পানির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময়ের প্রয়োজন পড়ে। তবে এখন পুকুর ছাড়াও উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। সেই পদ্ধতিতে গলদা চিংড়িও চাষ করা যায়।

এদিকে, চিংড়ির চাহিদা থাকায় অনেক চাষি মিশ্র পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলার অন্তর্গত কাঠালবাড়িয়া গ্রামের আবদুস সোবাহান জানান, তিনি গলদা চিংড়ির চাষ করছেন। চাহিদা থাকায় অনেক কৃষক তার থেকে কিশোর চিংড়ি সংগ্রহ করেছেন। ছয় মাসের মধ্যে লার্ভাগুলো ১২০ থেকে ১২৫ গ্রাম হয়ে যায়। স্থানীয় বাজারে এ চিংড়ির ভালো দাম পেয়েছেন তিনি। তবে বাড়তি দামে তাদের লার্ভা সংগ্রহ করতে হয়। তাই রাজশাহীতে লার্ভা উৎপাদন হলে কম দামে তা সংগ্রহ করতে পারবেন এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, রাজশাহীতে গলদা চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা আছে। এখন অনেক কৃষক চিংড়ি চাষ করছেন। এক্ষেত্রে তারা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া এটিকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কাজ করা হচ্ছে।