শীত নামছে ঠাকুরগাঁওয়ে, রয়েছে শঙ্কাও

ঠাকুরগাঁওয়ে নামছে শীত, পড়ছে কুয়াশাপঞ্জিকার হিসাবে শীতের আগমন ঘটতে এখনো মাস দেড়েক বাকি। কিন্তু উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের পরিবেশ যেন কিছুটা ভিন্ন। ভোরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে রাস্তাঘাট। ধানের গাছের আগায় জড়িয়ে রয়েছে মুক্তোর মতো শিশির বিন্দু। ভোরে ও রাত গভীর হলে হালকা গরম কাপড় গায়ে মুড়িয়ে নিতে হয়। এসব কিছুই বলে দেয় শীত নামছে এ জনপদে। শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে জনমনে শঙ্কাও রয়েছে।
শরৎকাল বিদায় নিয়েছে প্রায় ১২ দিন । ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে হেমন্ত ঋতুর যাত্রা। পুঁথিগত ধারণায় হেমন্তের শেষে শীত। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন প্রকৃতির রূপ পাল্টে দিচ্ছে। দেড় মাস পর নয় শরতের বিদায় এবং হেমন্তের শুরুতে শীত তার আগমনের খবর দিতে শুরু করেছে। হেমন্তের সূচনায় শীতের ছবি বলছে প্রকৃতি এতদিনের নিয়মে নিজ থেকেই নানা পরিবর্তন আনছে।
দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও এক সময় ‘নিশ্চিন্তপুর’ নামে পরিচিত ছিল। এই নামটি মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনও গ্রাম অথবা জনপদের ছবি। কিংবা মনে পড়ে যায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাসের ‘নিশ্চিন্দিপুর’ গ্রামের কথা। যদিও অনেকদিন আগেই চাপা পড়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই ‘নিশ্চিন্তপুর’ নামটি। জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট বলছে, কয়েকজন বিত্তশালী মানুষের খেয়ালি ইচ্ছাকে পূরণ করতে সাধারণের প্রিয় জনপদ নিশ্চিন্তপুরকে পাল্টে করা হয়েছিল ঠাকুরগাঁও। আর এ ইতিহাস অজানা রয়েছে বলে নিশ্চিন্তপুর শব্দটি উচ্চারিত হলে কখনও ঠাকুরগাঁওয়ের কথা মনে হয় না।
সেই ঠাকুরগাঁও জেলা এখন মধ্যরাতের পর থেকে হালকাভাবে কাঁপতে শুরু করেছে। তবে পূর্বদিকে লাল আভা দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর হালকা কাঁপন থেমে যায়। হালকা ঠাণ্ডার সাথে ভোরবেলা পড়তে শুরু করেছে কুয়াশাও। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঠাকুরগাঁও জেলায় শীতের আগমন ঘটলেও এবার কার্তিকেও আগাম বাজিয়ে দিয়েছে ঘণ্টাধ্বনি।

Thakurgaon News Picture 02
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে চলতি বছর আগাম শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশায় আস্তে আস্তে দৃষ্টিসীমা কমে আসতে থাকে। রাতভর হালকা বৃষ্টির মত টুপটাপ করে কুয়াশা ঝরতে থাকে। বিশেষ করে ঘাসের ডগা ও ধানগাছের আগায় জমতে দেখা যাচ্ছে বিন্দু বিন্দু শিশির কণা।
শহর ও শহরতলী ছাড়িয়ে গ্রামগুলোতে দেখা গেছে, পুরনো কাঁথা নতুন করে সেলাই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা। বাড়ির পাশে গাছের নিচে বসে নানা রঙের সুতো দিয়ে তারা তৈরি করছেন শীতের কাঁথা।
সবজি চাষি কাসেম জানালেন, অসময়ে হালকা শীতের কারণে ফসলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস আক্রমণ শুরু করেছে। ফসল রক্ষায় এখন কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া বিকল্প পথ নেই। সাধারণত কার্তিক মাসে এমনটি হয় না। কীটনাশকের জন্য এখন উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে।
ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার শাহাবুদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টির কারণে এবার অনেক আগেই শীত অনুভব হচ্ছে। দিনে কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। বাস চালক আইনালের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গত বছর এমন সময় কোনও কুয়াশা দেখা যায়নি। গত দু’দিন ধরে সকালে বাস নিয়ে বের হবার সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে উঁচু-নিচু জমিতে পানি জমেছে। সবজি চাষে বৃষ্টির পানি ও শীতের কারণে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দেখা দিতে পারে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা কৃষকদের কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার রকিবুল আলম জানান, স্বাস্থ্য নিয়ে সবাইকে সচেতন করার কাজ চলছে। হাসপাতালে শীতের জন্য আরও ৫০টি বেড বৃদ্ধিসহ স্টাফদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ শীতে করোনা সংক্রমণের ভয় রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক এবিএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, এ জেলা শীতপ্রধান হওয়ায় গত বছর থেকে আমরা কম্বলের পাশাপাশি বয়স্ক ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর মধ্যে লেপ বিতরণ শুরু করে মানুষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এ বছর লেপের সংখ্যা বাড়াবার উদ্যোগ নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ শীত মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট থাকলেও এবার শীতের সঙ্গে আছে করোনা বৃদ্ধির আশংকা, তাই অন্য বছরের চাইতে এ যুদ্ধটা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে।