ফেনীতে উপকরণ ছাড়াই সরকারি হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা!

ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়



করোনা দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে ফেনীর সবকটি সরকারি হাসপাতালকে ডেডিকেটেড করে ১০ শয্যার বেড চালু করা হলেও নেই জনবলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ। ফলে সাধারণ রোগীর সাথে কোভিড রোগী ভর্তির এই সিদ্ধান্তে যেমন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি সেবাদান ব্যাহত হওয়াসহ দ্রুত পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত করতে না পারলে ফের রোগীদের ভোগান্তি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া সরকার পর্যায়ক্রমে সব জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি ফেনীতে  রয়েছে এখনও কাগজে কলমে।

এদিকে সেবার মান বাড়াতে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিজস্ব অর্থায়নে লিকুইড অক্সিজেনের ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। শিগগিরই অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

ফেনীর সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন বলেন, ফেনীতে কোভিড টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, ডেডিকেটেট হাসপাতালের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সিলিন্ডার সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। পিসিআর ল্যাব ছাড়াও এ জেলায় জিন এক্সপার্ট মেশিনে করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি মেশিন সচল আছে আরো দুটি মেশিন সংযোজনের প্রক্রিয়া চলছে।

করোনাভাইরাস (গ্রাফিক্স: মারুফ রেহান)

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু ডেডিকেটেড ছাড়া সাধারণ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হলে রোগীর চাপে সেবায় যেমন হিমশিম খেতে হয় তেমনি অন্যদের সংক্রমণের শঙ্কাও থাকে বেশি। পাশাপাশি তাদের নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন, জনবল, বিটিএমসহ পরিবহন ব্যবস্থা।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে একটা সমস্যা হতে পারে, তা হলো জনবল সংকট। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হতে পারে। এ ঢেউ সফলভাবে সামলাতে হলে সব পর্যায়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।

ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জনবলের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি।

জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধির কোনও বালাই ছিল না। তাই এটি কার্যকরে জোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানো এবং বাধ্য করানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। মাস্ক না পরলে জরিমানার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে কারাদণ্ডও।

সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন আরো জানান, সবশেষ বুধবার (০২ ডিসেম্বর) ৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ১১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে প্রতি ৫টি নমুনার মধ্যে একটি পজিটিভ এসেছে।

তিনি জানান, গত ৪ দিনে মোট ২৮১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। আর জেলায় করোনা শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৩ জনে। মোট ১২ হাজার ২৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ১৭.২২ শতাংশ।

সূত্র জানায়, জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১৬ এপ্রিল। এরপরই প্রতিদিন আক্রান্তের তালিকা বাড়ছে। গত ৪ দিনে মোট ২৮১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। আর জেলায় করোনা শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৩ জনে। মোট ১২ হাজার ২৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ১৭.২২ শতাংশ।

জেলায় মোট ১ হাজার ৭৯৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আর করোনা ভাইরাসে জেলায় মোট ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফেনীতে সুস্থতার হার প্রায় ৮৪.৮৫ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার প্রায় ১.৯ শতাংশ।