রাজশাহীতে মদ সেবনে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৪

বিদেশি মদের সঙ্গে রেক্টিফায়েড স্পিরিটসহ অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে বিক্রি করে মাদক ব্যবসায়ীরা। আর থার্টিফার্স্ট নাইটে সেই মদ সেবনের কারণেই রাজশাহীতে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। মদ বিক্রেতা চার জনকে গ্রেফতারের পর  সোমবার (৪ জানুয়ারি) পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে। তবে পুলিশের তালিকায় মৃতের সংখ্যা পাঁচ জন।

যদিও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২ জানুয়ারি) বিকাল থেকে রবিবার (৩ জানুয়ারি) বিকাল পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— নগরীর হোসনীগঞ্জ এলাকার জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ফয়সাল হোসেন (২৮), জেলার বাগমারা উপজেলার শান্তাপাড়া এলাকার সজল (২৫), নগরীর বাকির মোড় এলাকার সাগর (২৫), হেতমখাঁ এলাকার তুহিন (২৬), কাদিরগঞ্জ এলাকার মুন আহমেদ (১৮) এবং দড়িখড়বোনা এলাকার ইশাকুল ইসলাম (২২)।

জানা গেছে, মদপানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নারীসহ এখনও কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের কাছে মদ বিক্রির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার চার জন হলো— নগরীর বোয়ালিয়া থানার সাগরপাড়া এলাকার পবিত্র সিংয়ের ছেলে পরিমল সিং (৬০),পরিতোষ সিংয়ের ছেলে বাপ্পা সিং (২৮), সাগরপাড়া বল্লভগঞ্জ এলাকার হাসেম আলীর ছেলে সাজু (৩০) এবং রাজপাড়া থানার সিপাইপাড়া এলাকার আবদুর রউফ ওরফে মতিনের ছেলে ইফতেখার হোসেন ওরফে সুমন (৫০)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে থেকে ৩টি কাচের তৈরি মদের খালি বোতল, টিউনিং মদ (মিশ্রিত মদ) তৈরির তরল পদার্থ ভর্তি একটি প্লাস্টিকের তৈরি বোতল, তেতুলের বিচি ভর্তি এতটি কাচের বোতল, কমলা কালারের ৫০ গ্রাম গুড়ো রঙ, ২৯টি টিন ও প্লাস্টিকের তৈরি কর্ক, ১১টি 

জব্দ করা মদের বোতলসহ অন্যান্য উপকরণ

কর্কের নিব ও ৫টি কর্কের প্রটেকশন, অ্যালকোহল ভর্তি ২টি প্লাস্টিকের সাদা বোতল উদ্ধার হয়। উদ্ধার করা আলামতগুলো রাসয়নিক পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘মদপানে মৃত্যু এবং অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনায় আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের তাৎক্ষণিক নির্দেশে এবং পরিকল্পনায় বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের সমন্বয়ে অবৈধ মদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এর মধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানার একটি দল মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন এবং চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এছাড়া গোপন সংবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে, তারা অতিরিক্ত লাভের আশায় বিদেশি মদের সঙ্গে রেক্টিফায়েড স্পিরিটসহ অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে এক বোতলকে একাধিক বোতলে পরিণত করেছিল। এই অবৈধ মিশ্রিত মদ তারা মৃত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করেছিল। গ্রেফতার ব্যক্তিদের ছবি অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে  দেখানো হলে তারাও এদেরকে মদ বিক্রেতা হিসেবে শনাক্ত করেন।’

অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস আরও জানান, এ ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবৈধ মদের উৎস সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য কঠোর অভিযান অব্যহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।