কৃত্রিমভাবে উৎপাদন করা গেছে দাতিনার পোনা

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এবার দাতিনা মাছের পোনা উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. লতিফুল ইসলামের নেতৃত্বে গবেষক দল নতুন বছরের শুরুতে দেশে প্রথমবারের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের সুস্বাদু দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন।

পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে দাতিনার তিনটি প্রজাতি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ মাছ ‘সাদা দাইতনা’ নামে বেশি পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম  Pomadasys hasta। এ মাছে কাঁটা কম এবং খেতেও সুস্বাদু।দাতিনা মাছের পোনা

পাইকগাছা লোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দেবাশীষ মণ্ডল বলেন, গবেষণার জন্য এ মাছের পোনা প্রথম ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিবসা নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়। কেন্দ্রের পুকুরে তা লালন-পালন করে আবদ্ধ জলাশয়ে প্রচলিত ভাসমান খাবারে অভ্যস্ত করার মাধ্যমে প্রজননক্ষম মাছে পরিণত করা হয়েছে। দাতিনা মাছের এ প্রজাতি দেখতে সাদা ও গড়ে ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের হয়। সর্বোচ্চ ১২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পাইকগাছা লোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. লতিফুল ইসলাম জানান, দাতিনার সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম হচ্ছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস। অর্থাৎ এ মাছ শীতকালে প্রজনন করে। দুই বছর বয়সে ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজন হলেই এরা প্রজননক্ষম হয়। পরিপক্ব মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রের হ্যাচারিতে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে এবার সর্বাধিক পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়েছে। হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনাকে এখন রটিফার জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদিত রেণু পোনার বয়স এখন দুই সপ্তাহ।

পাইকগাছা লোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বের দু-একটি দেশে দাতিনার খাদ্য ও খাদ্যাভাস এবং ডিম ধারণ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা হয়েছে। কিন্তু এর প্রজনন সম্পর্কিত কোনও গবেষণা তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই দাতিনা মাছের এ প্রজনন সফলতা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

উল্লেখ্য, এর আগে পাইকগাছা লোনাপানি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা কাঁকড়া, পারশে ও টেংরা মাছের পোনা উৎপাদন করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে ২৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশীয় মাছের ‘লাইভ জিন ব্যাংক’।

খুলনা জেলা শহর থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে পাইকগাছা থানায় ২৮ দশমিক ৭৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে ইনস্টিটিউটের লোনাপানি কেন্দ্র অবস্থিত। এ কেন্দ্র থেকে কৃত্রিম উপায়ে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষের উন্নততর কলাকৌশল উদ্ভাবন, চিংড়ি চাষিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বাগদা চিংড়ির প্রাকৃতিক উৎস নিরূপণ এবং উপকূলীয় পরিবেশসহ চিংড়ির পোনা সংগ্রহকালে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।