প্রতিবন্ধী হ‌য়েও স্বাবলম্বী মানিক

পেশায় ছোটখাট ফার্নিচার ব্যবসায়ী বান্দরবান বালাঘাটার মানিক। এক সময়  চাঁদের গাড়ি চালাতো সে।  মোটামু‌টি ভালোই কাট‌তো তার জীবন। একদিন চাঁদের গাড়ি খাদে পড়ে দু’পা নষ্ট হয়ে শারীরিক প্রতিব‌ন্ধী হয়ে যায় মা‌নিক।  সেই দিন থে‌কেই  হুইল চেয়ারেই তার চলাফেরা। তারপরও সে প‌রিবা‌রের বোঝা না হ‌য়ে নিজেই আয় করে সংসার চালাচ্ছেন। ছে‌লে মে‌য়ে‌দের লেখা পড়া শেখাচ্ছেন নিজের রোজগারের টাকা দিয়েই। বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ ১০ জনকে নিয়ে ভালোভাবেই কাটছে তার সংসার। 

কাজ করছেন মানিক
স্থানীয়‌রা জানান, জন্ম থে‌কে প্রতিবন্ধী নয় মা‌নিক। একসময় তিনি চাঁদের গাড়ি চালাতেন। অল্প বয়‌সেই চাঁ‌দের গাড়ি খাদে পড়ে দু’পা নষ্ট হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী‌ হয়ে যান। তারপরও নিজের সাহস ও স্বদিচ্ছায় আজ সাবলম্বী মানিক। হুইল চেয়ার করে চলা‌ফেরা কর‌লেও  ফার্নিসার তৈরির পর বিক্রি করে যা আয় করেন তা দিয় খুব ভালোভাবেই কা‌টে তার সংসার। ছে‌লে-মে‌য়ে‌কে পড়ালেখা শেখাচ্ছেন।


মা‌নি‌কের সহ‌যোগী রফিক জানান, মানিক ভাই অনেক কষ্ট করে রোজগার ক‌রে খাওয়া-দাওয়া করেন। আমরাও মানিক ভাইকে তার কা‌জে সহযোগিতা করি যতটুকু করতে পারি। মা‌নিক ভাইও কখ‌নেও কারও কাছে হাত পাতে না। 
মা‌নি‌কের ছোট ভাই সুজন চন্দ্র দাশ ব‌লে, ‘আমাদের বড় ভাই টুকিটাকি ব্যবসা করে কোনোরকম সবাই‌র ভরণ পোষ‌ণের খরচ জোগায়। সরকারি সাহার্য পে‌লে সুন্দর ভাবে চলতে পার‌তো সে।’
মা‌নি‌কের বাবা বিনোদ চন্দ্র দাশ ব‌লেন, ‘মানিক আমার বড় ছে‌লে। কিন্তু সে প্রতিবন্ধী। সে ব্যবসা করলেও তা দি‌য়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যয় চালানো যাচ্ছে না। আমরাও তাকে সহযোগিতা করি।’

মানিক
মা‌নিক ব‌লেন, আ‌মি একসময় চাঁদের গাড়ি চা‌লি‌য়ে পর্যটক‌দের বি‌ভিন্ন জায়গায় নি‌য়ে যেতাম। কিন্তু সে ভাগ্য আমার বে‌শি‌দিন জুট‌লো না। এক‌দিন গাড়ি খা‌দে প‌ড়ে আমার দু’পা নষ্ট হ‌য়ে গে‌ছে। কিন্তু তারপরও আমি ব‌সে থা‌কি‌নি। চেষ্ঠা ক‌রে‌ছি কিছু একটা করার। অব‌শে‌ষে বে‌ছে নিলাম ফা‌র্নিচার ব্যবসা। বড়সড় ব্যবসা না হ‌লেও কোনোরকম সংসার চল‌ছে এ ব্যবসা ক‌রে। নি‌জের চা‌হিদা পূরণ ক‌রে প‌রিবা‌রের ভরণন পোষণও কর‌ছি এ ব্যবসা‌য়ের আ‌য়ে।

তি‌নি ব‌লেন, সরকারি সহজ কি‌স্তি‌তে ঋণ বা আ‌র্থিক সহ‌যো‌গিতা পে‌লে আমি আমার ব্যবসা‌কে আ‌রও উন্নত ক‌রে আ‌রও ভালোভা‌বে সংসার চালা‌তে পারতাম।
বান্দরবান সমাজ সেবার উপ-প‌চিালক মিল্টন মুহুরী ব‌লেন, মানিক আমাদের একজন জরিপভুক্ত প্রতিবন্ধী। তার যদি কোনও প্রকার সহায়তার প্রয়োজন হয়, সমাজ সেবা অধিদফতর থেকে সে সহায়তা গ্রহণ কর‌তে  পারবে। সে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।