‘চাউলের বাজারে আগুন, আমরা কেমনে বাঁচবো?’

‘ফজরের আযানের পর বাড়ি থাকি রওনা দেই। ভোর থাকি দুইপর পর্যন্ত লাইনে খাড়া থাইক্কা চাউল লইয়া বাড়িত যাই। বাজার থাকি চাউল কেনার সামর্থ্য নাই। বাজারের এক কেজি মোটা চাউলের দাম ৪৫ টাকা। এত টাকা দিয়া চাউল কিনমু ক্যামনে। ইতার লায় সরকারি চাউলের লাগি তিন মাইল পথ পারি দিয়া টাউনে আই’ —এভাবে নিজের খাদ্য সংকটের কথা বলছিলেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের জলিলপুর গ্রামের আকুল বিবি (৫৮)। তিনি জলিলপুর থেকে নুতনপাড়ায় ওএমএসের চাল নিতে এসেছেন।

সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের আয়মনা বিবি (৬২) বলেন, ‘কোনও সময় চাউলের এত দাম ছিল না। এবার চাউল ৩০ টাকার চাউল ৪৫ টেকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। রোজি-রোজগার কম কিন্তু চাউলের দাম বেশি। চাউল কিনলে বাজারের পয়সা থাকে না।’

শহরের মল্লিকপুর এলাকার সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘জামাই রিকশা চালায়। সারাদিনে তিনশ থেকে চারশ টাকা রোজগার করে। রিকশা ভাড়া জমা দেওয়ার পর হাতে দুই আড়াইশো টাকা থাকে। এ টাকা দিয়ে বাজার থেকে চাল কিনলে অন্য বাজারের কোনও কিছু করা যাইতো না। তাই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল কিনি। অনেক দিন কিনতে পারি আবার অনেকদিন পারি না। তখন খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।’

বাহাদুরপুর গ্রামের রাজিয়া বেগম বলেন, ‘বাজারের ধানের দামও আগুন চাউলের দামও আগুন। গরীব মানুষ কেমনে বাঁচবো। ধানের দাম ১৪০০ টাকা মণ চালের কেজি ৪৫ টাকা। এইটা তো দেখি গরীব মারার বছর আইছে।’

 

নুতনপাড়া আবাসিক এলাকার কমলা রানী দাস বলেন, ‘ওএমএস এর চাউলের কেজি ত্রিশ টাকা আটার কেজি আঠারো টাকা। ভাগ্য ভালো থাকলে চাউল কেনা যায় নইলে আটা নিয়ে বাড়ি যেতে হয়।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জানুয়ারি থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের ৫ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার মানুষের জন্য সরকারি ভাবে ওএমএস এর চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। পৌর এলাকার নুতনপাড়া, হাছননগর, তেঘরিয়াসহ ৫টি পয়েন্টে ডিলাররা চাল বিক্রি করছেন। প্রত্যেক ডিলার প্রতিদিন একটন করে চাল-আটা বিক্রি করতে পারেন। জেলা শহর ছাড়া অন্য কোনও উপজেলায় ওএমএস এর চাল বিক্রি হচ্ছে না। স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, স্থানীয়ভাবে চাল কিনতে পারছেন না তারা। দিনাজপুর থেকে মোটা বালাম চাল এনে বিক্রি করছেন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চালের দাম অনেক বেশি অন্যদিকে আড়তগুলোতে সে পরিমাণ চাল মজুত নেই। তাই চালের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।

নুতনপাড়া এলাকার ওএমএস ডিলার রতন লাল ধর বলেন, গত ১৫ দিনে চাউলের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চাল নিতে আসেন অসংখ্য গরীব অসহায় মানুষ। সবাইকে চাল বা আটা দেওয়া যায় না। ১ টন চাল বা ১ টন আটা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। তাই বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।