৪ বছর আগের শক্রতার জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বৃদ্ধ নিহত 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় চার বছর আগের শত্রুতার জের ধরে  দুই পক্ষের সংঘর্ষে ফয়েজ মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আর অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১৩ মার্চ) সকালে কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে নিমবাড়ী গ্রামে ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত ফয়েজ মিয়া (৪০) ও রিমন মিয়া নামে  দু’জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরবর্তী সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

পুলিশ ও প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১৭ সালে নিমবাড়ী গ্রামে পান্ডুগোষ্ঠী এবং কাবিলা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ওই সময় রহিস মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। এ ঘটনায় কাবিলা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। এই মামলায় প্রধান সাক্ষী ছিলেন পান্ডু গোষ্ঠীর ফয়েজ মিয়া। রহিস হত্যা মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর সম্প্রতি আদালত থেকে জামিন পেয়ে এলাকায় আসেন। পরে পূর্বের হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্যে পান্ডু গোষ্ঠীর লোকজনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন আসামিপক্ষের লোকজন। এতে রাজি না হওয়ায় শনিবার সকালে কাবিলা গোষ্ঠীর লোকজন পান্ডু গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালায়। এসময় টেঁটার আঘাতে ঘটনাস্থলে পান্ডু গোষ্ঠীর ফয়েজ মিয়া নিহত হন। তিনি রহিস মিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী ছিলেন।
নিহতের ছেলে ইকরাম মিয়া বলেন, তারা গত ৪ বছর ধরে আমাদের পরিবারের ওপর নানাভাবে হামলা নির্যাতন  চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার চাচার হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন আমার বাবা। মামলা কার্যক্রম শেষ পথে ছিল। শুধু রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। আমরা আমাদের চাচার হত্যা মামলাটি মীমাংসা না করার কারণেই আজকে তারা আমার বাবাকে হত্যা করছে। আমি হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।

ফয়েজ মিয়ার মেয়ে ইভা আক্তার বলেন, ‘আজকে সকালে আমার বাবা বাজারে গিয়েছিলেন। আমি মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে শুনতে পারি আমার বাবা মারা গেছেন। গত ৪ বছর আগে আমার চাচাকে তারা হত্যা করেছিল। সে ঘটনার বিচার আজও পাইনি। কিন্তু আজকে আমার বাবাকে তারাই হত্যা করলো।  কার কাছে বিচার চাইবো।’

ঘটনায় আহত একজন বলেন, আমরা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ করে হামলা করে তারা। আমাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রাস্তার কিনারে ফেলে দেয় এবং তারা ফয়েজ ভাইকে ঘটনাস্থলেই মেরে ফেলে।

আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ফয়েজ মিয়া ও রিমন নামে দু’জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ফয়েজ মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে  ডা. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের এখানে বেশ কয়েকজন চিকিৎসা নিয়েছেন । এরমধ্যে প্রথমে আসা ফয়েজ মিয়া নামের রোগীর শরীরে টেঁটার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আহত সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

ঘটনার খবর পেয়ে কসবা থানার পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কসবা সার্কেলর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাহিদ হাসান  বলেন, কসবা নিমবাড়ীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ফয়েজ মিয়া নামে একজন প্রথমে গুরুত্বর আহত হয়ে পড়ে হাসপাতালে গিয়ে মারা যায়। ২০১৭ সালের একটি হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। পরর্বতী সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের  মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও থানায় এ ব্যাপারে মামলা হয়নি। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।