গোর্কির ভয়াবহতার কথা ভুলতে পারেন না উপকূলবাসী

নভেম্বর এলেই ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষ গভীর শোকে আঁতকে ওঠেন। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে উপকূলের ১০ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। তাই অর্ধশত বছর পরও স্বজন হারানোর ব্যথা ভুলতে পারেননি তারা। এ ছাড়াও লাখ লাখ পশু-পাখির মৃত্যু হয়।

সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। চলছিল রমজান মাস। সারাদিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যার পর থেকেই জলোচ্ছ্বাসের পানি বাড়তে বাড়তে এক সময় বিশাল উচ্চতায় সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। কারও কারও মতে ২৫-৩০ ফুট উচ্চতা দিয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি বয়ে যায়।  জলোচ্ছ্বাসে ভোলা জেলার বেশির ভাগ এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শুধু ভোলা জেলাতেই প্রাণ হারায় দুই লাখ মানুষ। 

এদিকে, একের পর এক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে আজও ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আজও উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদে বেঁচে থাকার জন্য গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। তাই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার, মাটির কিল্লা ও এই দিনটিকে উপকূল দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে উপকূলবাসী।

‘জলবায়ু-বিপন্ন উপকূলের সুরক্ষার জন্য ন্যায্যতার দাবি জোরালো হোক ও উপকূলের জন্য হোক একটি দিন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণার দাবিতে ভোলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সকালে ভোলা প্রেস ক্লাবের সামনে যুব রেডক্রিসেন্ট ভোলা, ব-দ্বীপ ফোরাম, ইয়ুথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশ ও ভোলা নাগরিক অধিকার ফোরাম, উপকূল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে ১২ নভেম্বর নিহতদের স্মরণে ভোলা প্রেস ক্লাবে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে একদিনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা আর কখনও ঘটেছে কিনা এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। ১৯৭০ সালের বিভীষিকাময় সেই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের স্মৃতি নিয়ে এখনও কিছু মানুষ বেঁচে রয়েছেন। ৫১ বছরের ব্যবধানে এখনও উপকূলের অনেক মানুষ সেদিনের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের স্মৃতির আয়নায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘সেদিন পাকিস্তানি শাসকরা এই মহাদুর্যোগের প্রেক্ষাপটে যথাযথ ভূমিকা রাখেনি। আর সে কারণে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে হুংকার দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী দূরে থাক জাতীয়ভাবেও ১২ নভেম্বর শোক প্রকাশের কোনও কর্মসূচি আমরা দেখতে পাই না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমগুলো থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ দিনটিকে যথাযথভাবে স্মরণ করা হয় না। স্মরণ করা হয় না সেদিনের হারিয়ে যাওয়া আমাদের ভাই-বন্ধুদের।

‘এখনও একের পর এক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করে আজও ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষের বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আজও উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদে বেঁচে থাকার জন্য গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার ও টেকসই বেড়িবাঁধ। তাই পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার, টেকসই বেড়িবাঁধ, মাটির কিল্লা নির্মাণসহ ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হোক।

ইয়ুথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব প্রধান আদিল হোসেন তপুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ভোলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ এম ফারুকুর রহমান, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর দুলাল চন্দ্র ঘোষ, ঢাকাস্থ ভোলা সদর উপজেলা সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া জাহাঙ্গীর, দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক ও ভোলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আলহাজ মু. শওকাত হোসেন, ভোলা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ মো. ইউনুস, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম, ভোলা প্রেস ক্লাব সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু, ভোলা প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি জুন্নু রায়হান, দৈনিক কালবেলার জেলা প্রতিনিধি ও বিয়ে বাজারের স্বত্বাধিকারী প্রভাষক মনিরুল ইসলাম, উপকূল ফাউন্ডেশন ভোলা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এম শাহরিয়ার জিলন প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব-দ্বীপ ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী মীর মোশারেফ হোসেন অমি।

জীবন-পুরাণ আবৃত্তি সংসদের সভাপতি সাংবাদিক মশিউর রহমান পিংকুর সঞ্চালনায় এ কর্মসূচিতে ভোলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।