ঈদকে কেন্দ্র করে শকুনি লেকে মিলনমেলা

মাদারীপুর শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান লেকপাড়, যেটি ‘শকুনি লেক’ নামে পরিচিত। প্রতি বছরের মতো এবারও এই লেকে ঈদের ছুটিতে আনন্দে মেতেছে মাদারীপুরবাসী। যেকোনও বিশেষ দিনে শকুনি লেকের পাড় মাদারীপুরসহ আশেপাশের জেলার মানুষের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। আর ঈদে লেক ঘিরে দর্শনার্থীদের সমাগম আরও বাড়ে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এবার ঈদের প্রথম দিন থেকেই শকুনি লেকের পাড়ে দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল চোখেপড়ার মতো।

লেকটির অবস্থান মাদারীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে। এটি ঘিরে মানুষের পদচারণা থাকে সারা বছরই। লেকটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে বরিশাল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ থেকেও অনেকে ঘুরতে আসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের মাঝামাঝি শকুনি নামক এলাকায় ২০ একর জমির ওপর লেকটি খনন করা হয়।  প্রচলিত রয়েছে, লেকটি খনন করতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চল থেকে দুই হাজার শ্রমিক এনেছিল। একটানা কাজ করে প্রায় নয় মাসে এর খনন কাজ সম্পন্ন করেন তারা।

রাতের শকুনি লেকপরে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৬ সালে সাড়ে ২২ কোটি টাকা খরচ করে লেকের উন্নয়ন কাজ করা হয়। এর আওতায় লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, আধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, শিশুপার্ক, মুক্তমঞ্চসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করা হয়। এখন শহরবাসীর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে লেকটি। দূর-দূরান্ত থেকে সৌন্দর্যপিপাসু অনেকেই প্রতিদিন আসেন লেকের পাড়ে।

লেকের চারপাশে গড়ে উঠেছে ১০টি ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট। সেই সঙ্গে ঈদকে কেন্দ্র করে বাহারি শৌখিন পণ্য ও বাচ্চাদের নানা খেলনা সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। প্রতি ঈদের মতো এবারও দর্শনার্থীদের মিলনমেলা বসেছে লেকের পাড়ে। দর্শনার্থীদের ভিড়ে ঈদ আমেজ এখনও রয়েছে শকুনি লেক ঘিরে। রাতেও কমতি নেই লোকের আনাগোনা।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে লেকে ঘুরতে আসা কালকিনির গোপালপুর থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মী আতিকুর রহমান আজাদ বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই লেকে মানুষের সমাগম ঘটে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় ভিড় বেশি হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে এই লেকে যেন দর্শনার্থীদের মিলনমেলা বসে প্রতি বছর। এদিকে অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন লেকপাড়ে বসে আমরা সুন্দর সময় কাটিয়ে থাকি।’

রাজৈর উপজেলার টেকের হাট থেকে আসা যুবক সুজন হোসেন রিফাত বলেন, ‘শুধু মাদারীপুর শহরই নয়, অন্য এলাকা থেকেও অসংখ্য মানুষ ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসেন এখানে। জেলা শহরে অন্য কোনও বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় এখানেই এসে সময় কাটায় মানুষ।’

বরিশালের উজিরপুর এলাকার সাথি বেগম বলেন, ‘আমরা প্রাই এখানে ঘুরতে আসি। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে আজ বিকালে লেকটি দেখতে এলাম। এখানে এসে মুক্ত পরিবেশ আমাদের খুব ভালো লাগে।’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘আমাদের এই লেকটিতে দর্শনার্থীদের আনাগোনা ঈদের দিন থেকে শুরু করে আট-দশ দিন থাকে। দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে ও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সদর থানার পুলিশের একটি দলকে সার্বক্ষণিক লেকের বিভিন্ন অংশে দায়িত্ব পালন করছেন।’