অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনা: দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় পরিবার

ফেসবুকে ছাত্রের পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে লাঞ্ছনার শিকার নড়াইল সদর উপজেলার মীর্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বড়কুলার গ্রামের বাড়িতে সুনসান নীরবতা। পরিবারের সদস্যরা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। অধ্যক্ষ কোথায় আছেন বলতে পারছেন না তারা। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তারা।

মঙ্গলবার বিকালে অধ্যক্ষের স্ত্রী সোনালি দাস বলেন, ‘গত ১৮ জুন কলেজে অপ্রীতিকর ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটার পর আমার স্বামীকে সেফ কাস্টডিতে নিয়ে যায় পুলিশ। পরের দিন পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে তিনি আর বাড়িতে আসেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।’

ঘটনার পর তারা কোনও ধরনের নিরাপত্তাহীনতা কিংবা হুমকিতে রয়েছেন কিনা– এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় রয়েছে। কেউ কোনও ধরনের হুমকি দেয়নি। তবে ঘটনার পর থেকে পুরো পরিবার সদস্যরা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন।’

অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বাবা সুমন্ত বিশ্বাস (৭৫) বলেন, ‘আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে যারা অপমান-অপদস্থ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

বড়কুলার গ্রামের বাসিন্দা অমিত শিকদার (৩৩) বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্বপন বাবু একজন ভদ্র প্রকৃতির লোক। গ্রামের কোনও লোকের সঙ্গে কখনও তাকে দুর্ব্যবহার করতে দেখিনি। তার (অধ্যক্ষ) অপমানে আমরা হতবাক হয়েছি।’

বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিমায়েত হোসাইন ফারুক বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় চরম ধিক্কার জানাই। ঘটনার পেছনে যাদের ইন্ধন রয়েছে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রের পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় গত ১৮ জুন কলেজে লাঞ্ছিত হন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। তাকে জুতার মালা পরানো হয়। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে অধ্যক্ষকে পুলিশ সেফ কাস্টডিতে নেয়। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ছাড়া পাওয়ার পর ভয়ে ও আতঙ্কে ওই শিক্ষক বাড়িতে না ফিরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে, পুলিশ পাহারায় রয়েছে অধ্যক্ষের পরিবার। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কলেজ বন্ধ এবং এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্র ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় কারাগারে আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।