বস্তাবন্দি মাদ্রাসাছাত্রী উদ্ধার: ধর্ষণ-অপহরণের মামলা

ঠাকুরগাঁওয়ে নদীর পাড় থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাদ্রাসাছাত্রীকে (১৪) উদ্ধারের ঘটনায় ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর বড় ভাই ঠাকুরগাঁও সদর থানা মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়েছে মাদ্রাসাছাত্রীর স্বামী ও এক নারীসহ চার জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার-পাঁচজনকে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে পৌর শহরের টাঙ্গন নদী থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায়। সে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কওমি মহিলা মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগের ছাত্রী। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন: নদী থেকে বস্তাবন্দি মাদ্রাসাছাত্রী উদ্ধার

উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী জানায়, তাদের গ্রামের বাড়িতে গুলজান বেগম নামে এক নারী ভাড়ায় থাকতেন। গোপনে তার কিছু ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন তিনি। পাচার করে দেওয়ার হুমকিও দিতেন। বিষয়টি জানার পর মে মাসে ঠাকুরগাঁও শহরের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য অজু করতে বের হয়। অজু শেষে দেখে, চার জন যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে। এ সময় ছবিগুলো নিতে চাইলে হাত বাড়াতে বলে তারা। হাত বাড়ানো মাত্রই টেনে নিয়ে চলে যায়। মারধরের একপর্যায়ে তাকে বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলে। তারপর কী হয়েছে কিছুই বলতে পারছে না।

মাদ্রাসাছাত্রী আরও জানায়, তিন মাস আগে এলাকার এক কিশোরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ে নিয়ে ঝামেলা চলছে। স্বামীর সঙ্গে থাকছেন না বলে জানান।

মাদ্রাসার মুহতামিম হজরত আলী বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের মতো রাত ১১টায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের সময় তাকে রুমে দেখতে না পেয়ে সহপাঠীরা খোঁজাখুঁজি করে। অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়। এরপর পাশেই টাঙ্গন নদীতে বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে পাওয়া গেলে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার সঙ্গে কী ঘটছিল তা আমরা জানতাম না। এমনকি সে যে বিবাহিত, সে খবরও গোপন রাখা হয়েছে। তার রুম থেকে একটি চিঠিও উদ্ধার করা হয়েছে।’

ভুক্তভোগীর বড় ভাই ও মামলার বাদী বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ে বেশ কয়েকবার আমার মায়ের সঙ্গে গুলজানে তর্কাতর্কি হয়েছে। তিনি কুপরামর্শ দিয়ে আমার বোনকে গ্রামের এক কিশোরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তিনিই গত রমজানে একদিন সেহরির পর আমার বোনের ঘরে ঢুকিয়ে দেন। সে সময় পরিবারের লোকজন ওই কিশোরকে আটক করে। পরে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় তার সঙ্গে আমার বোনের অ্যাফিডেভিট করে বিয়ে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে ওই কিশোরের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। গুলজান আমার বোনের ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো দেখিয়ে হুমকি দিতেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বিয়ের খবর গোপন রেখে বাড়ি থেকে দূরে রাখার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করি। এসব ঘটনার জেরেই গুলজান, ওই কিশোর ও তার বাবা-মা মিলে আমার বোনকে অপহরণ করে।’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক মো. শিহাব জানান, ‘কিশোরীর চিকিৎসা চলছে। সে এখন সুস্থ আছে।’

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ছাত্রীর বড় ভাই মামলা করেন। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।