শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা নেই, দুশ্চিন্তায় আমন চাষিরা

নীলফামারীতে ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা নেই। প্রায় একমাস ধরে চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ। এতে আমন চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উপায় না পেয়ে কেউ শ্যালো মেশিন, কেউ বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার করে সেচ দিয়ে আমন রোপণ করছেন। কিন্তু প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে কৃষিশ্রমিকরাও জমিতে কাজ করতে চাচ্ছেন না। প্রচণ্ড রোদে কৃষকের বীজতলাও পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এবার জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। 

নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কলোনিপাড়ার কৃষক মমিনুর রহমান (৪৫) বলেন, ‘আমি প্রতি বছর ১০ বিঘা জমিতে আমন রোপণ করি। কিন্তু এবার পুরো জুলাই মাস ধরে বৃষ্টি নেই, তাই বৈদ্যুতিক মোটরের সেচ দিয়ে আমন রোপণ করছি। এতে খরচও বেড়ে যাচ্ছে, জমিতে সেচও বার বার দিতে হচ্ছে। বর্ষার পানিতে এক বিঘায় ধান রোপণে খরচ চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর শ্যালো বা বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে ধান রোপণে এক বিঘায় খরচ হয় ছয় হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা। বৃষ্টির পানি না থাকায় কৃষকরা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে।

একই উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী (৩৮) বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে কৃষিশ্রমিক সংকটের পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে আমন রোপণ করতে হচ্ছে। আমাদের এবার আমন চাষে লোকসান গুনতে হবে।’

উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের কৃষক রুবেল ইসলাম (৫৬) বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমন ধানের চারা এখনও রোপণ করতে পারিনি। আমার তৈরি করা জমিগুলো রোদে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। শ্যালো মেশিনের পানিতে আমনের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৃষ্টি না হলে এবার পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হবে।’

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, বৃষ্টির পানির বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক মোটর, শ্যালো মেশিন, বিএডিসি সেচ প্রকল্প, গভীর নলকূপ ও বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে আমন রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে এক বিঘায় ধান রোপণে খরচ হয় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা। আর এখন সেই জমিতে কৃষকের খরচ পড়ছে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এখন বর্ষা মৌসুম। তবু নীলফামারীতে বৃষ্টি নেই। আমরা কৃষকদের সেচ দিয়ে আমন রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।’