চমেক হাসপাতালে নিহত ১১ জনের স্বজনদের আর্তনাদ

মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। কারও মা-বাবা, কারও ভাই এবং কারও বন্ধু-স্বজনদের কান্না-আর্তনাদে হাসপাতাল এলাকায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে।  শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে মীরসরাইয়ের বারতাকিয়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছয় জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন– মাহিন (১৮), তানভীর হাসান (১৮), জুনায়েদ হোসেন (১৮), জিয়াউল হক সজীব, মোছহাব আহমেদ হিসাম, মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৮)।

নিহতরা সবাই হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকার বাসিন্দা। মাইক্রোবাসচালক ছাড়া বাকিরা ওই এলাকার যুগিপাড়ায় অবস্থিত আর অ্যান্ড কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষক।

হতাহতদের চমেক হাসপাতালে আনা হয়নিহত জিয়াউল হক সজীবের বাবা আবদুল হামিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সজীবসহ তিন বন্ধু মিলে এ কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। চার মাস আগে এ কোচিং সেন্টার করে তারা। এখনও ওই টাকা পরিশোধ করা হয়নি। সজীব সকাল সাড়ে ৭টায় পিকনিকে যায়। সে সময় আমার সঙ্গে কথা হয়। ছেলে আমার থেকে দোয়া নিয়ে গেছে। দুপুর ২টার দিকে খবর আসে তাদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে।’

আরও পড়ুন: মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত

ছেলের জন্য বিলাপ করতে করতে এই বাবা বলেন, ‘আমি মুদির দোকানে চাকরি করি। আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। সজীব সবার বড়। সজীব ওমরগনি কলেজে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর অনার্সে ভর্তি করা হয়। এখনও অনার্স শেষ হয়নি। অভাবের কারণে তাকে লেখাপড়ার খরচ দিকে পারিনি। আমার ছেলে টিউশনি করতো।’

হাসপাতালে বাবার সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন, জিয়াউল হক সজীবের ছোট ভাই তৌসিফ।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন নিহত ১১ জন

এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোছহাব আহমেদ হিসাম নামে এক ছাত্র। হিসাম ওই কোচিং সেন্টারের ছাত্র। হাটহাজারী উপজেলার কেএস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল সে। তার মৃত্যুতে হাসপাতাল এলাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। বাবার মৃত্যুর পর হিসাম চাচা মানিকের কাছে থেকে বড় হয়েছেন। 

হিসামের চাচা বলেন,  ‘হিসামের বাবা মোজাফফর আহমেদ পাঁচ বছর আগে মারা যান। তার মা জাহেদুন্নেসা সিকদার থাকেন বড় মেয়ে সাজিদা আফরিনের  সঙ্গে কানাডায়। বড় ভাই জিহাদ আহমেদ থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। আরেক বোন জয়া স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। এখনও দুর্ঘটনার খবর জানেন না হিসামের মাসহ ভাই-বোন। হিসাম আমার কাছে থাকতো। এখন তার মা, ভাই-বোনকে কী বলবো?’

হিসামের প্রতিবেশী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘হিসামের কানাডায় চলে যাওয়ার কথা ছিল। এসএসসি পরীক্ষার পর মায়ের কাছে চলে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল।’

নিহত মাহিনের চাচা আলাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘সকালে বন্ধু ও শিক্ষকরা মিলে মাইক্রোবাসে খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে যায়। ফেরার পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় মাহিনসহ ১১ জন মারা যান। তাদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ খোরশেদ আলম বলেন, ‘মাইক্রোবাসে ১৬ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের ১১ জন ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত পাঁচ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের লাশ নেওয়ার জন্য খবর দেওয়া হয়েছে।’