এক সপ্তাহে ভোলার হাসপাতালে সহস্রাধিক ডায়রিয়া রোগী

আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভোলায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল ও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে এই সাত হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।

জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পরও কোনও উন্নতি না হওয়ায় অনেক রোগীকে ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ১৫। ভোলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিনই রোগী আসছে এ হাসপাতালে। ধারণক্ষমতার বেশি রোগী আসায় হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোরে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেককে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ভোলা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায় ডায়রিয়া রোগীর জন্য কোনও জায়গা ফাঁকা নেই। এই অবস্থার মধ্যে চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার ফরহাদ হোসেন জানান, এক বছর বয়সী সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন তিনি। সেখানে কোনও উন্নতি না হওয়ায় ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে এসে দেখেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনও শয্যা খালি নেই। তাই শিশুসন্তানকে হাসপাতালের বারান্দায় রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন।

একই অবস্থা তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে আসা নুসরাত বেগমের। তার শিশুসন্তানকে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে কোনও উন্নতি না হওয়ায় ভোলা সদর হাসপাতালে আনেন। কিন্তু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনও শয্যা খালি নেই। নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের ইয়ানুর বেগম জানান, তার শাশুড়ি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে কোনও উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। শয্যা না পাওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় ফ্লোরে  চিকিৎসা নিচ্ছেন।

একটি বেডে দুই-তিনটি শিশু রোগীকে চিকিৎসা নিতেও দেখা গেছে। এতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে ভোলা সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৫৭ শিশু। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে ১৩৯ জন। বাকিরা হাসপতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে।

এদিকে, ডায়রিয়ার পাশাপাশি হঠাৎ করেই শিশুরা নিউমোনিয়ার আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন– শিশুদের ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভোলায় ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের পুরনো ভবনে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২৫টি। বর্তমানে সেখানে ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগী রয়েছে। তাদের বেশির ভাগ নিউমোনিয়া আক্রান্ত। বেডে জায়গা না পেয়ে অনেকেই গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে কখনও ঠান্ডা আবার কখনও গরমের কারণে শিশুদের চাপ বেড়েছে হাসপাতালে।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে শিশু রোগীদের চাপ বেড়েছে। আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছি।’

ভোলা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবদুল মজিদ শাকিল জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় ভোলায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ স্যালাইনসহ ওষুধ রয়েছে। হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ রোগী আসে। তার মধ্যে একশ’ থেকে দেড়শ’ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তাদের মধ্যে যারা সিভিয়ার পর্যায়ের তাদের ভর্তি করা হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. লোকমান হাকিম জানান, ভোলায় হঠাৎ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে বারান্দায় ও ফ্লোরে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে।