ভুয়া কাজির বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় ভুয়া কাজি দশম শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রীকে বাল্যবিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, শোলক ইউনিয়নের ধামুরা বন্দরের ইসলামি হারবাল ফার্মেসির মালিক মাহমুদুল হাসান কাজী সেজে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে এ বিয়ে পড়ান। 

বুধবার দুপুরে উত্তর ধামুরা গ্রামের আক্কাস আলী কবিরাজের ছেলে মামুন কবিরাজের সঙ্গে ওই কিশোরীর বাল্যবিয়ে পড়ানো হয়। সোমবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিষয়টি স্বীকার করে ওই কিশোরীর মা বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান বিয়ে পড়িয়েছেন। কাজি হিসেবে তিনি পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছেন।’

শোলক ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন সোহেল বলেন, ‘আমি ওই ছাত্রীর পরিবারের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, তাদের ধোঁকা দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে বাল্যবিয়ে পড়িয়েছেন মাহমুদুল হাসান। ওই প্রতারক, ভুয়া কাজির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হবে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালাম মোল্লা ওরফে কালু মেম্বার বলেন, ‘ওই দিন বিয়েতে আমারও দাওয়াত ছিল। কিন্তু বাল্যবিয়ে হওয়ায় আমি ওই দাওয়াতে যাইনি। আমি বাল্যবিয়ে সমর্থন করি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ বন্দর এলাকায় এ নিয়ে বাগবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি প্রকাশ পায়। সে সময় জানা যায়, সেখানে কাজী হিসেবে যে ছিল সে আসলে প্রকৃত কাজি নয়। তার কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইশরাত জাহান জানান, ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইসলামি হারবাল ফার্মেসির মালিক মাহমুদুল হাসান এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, বাল্যবিয়ে হলো অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিয়ে। বাংলাদেশে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর। এর আগে বিয়ে করলে সেটি বাল্যবিয়ে বলে গণ্য হবে।

বাল্যবিয়ের শাস্তি

এই আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক কোনও নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তার জন্য দুই বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে উভয় দণ্ড পেলে অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনও নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে এক মাসের আটকাদেশ কিংবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তি পাবেন।

বাল্যবিয়ে সংশ্লিষ্ট বাবা-মাসহ অন্যান্য অভিভাবকের শাস্তি

আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, বাবা-মা অভিভাবক অথবা অন্য কোনও ব্যক্তি, আইনগতভাবে বা আইনবহির্ভূতভাবে কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর কর্তৃত্ব সম্পন্ন হয়ে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করলে অথবা করার অনুমতি বা নির্দেশ দিলে অথবা নিজেদের অবহেলার কারণে বিয়ে বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তার জন্য তিনি দুই বছর অথবা ন্যূনতম ছয় মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে উভয় দণ্ড পেলে অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।