সীমান্ত সড়ক পরিদর্শনে সেনাপ্রধান

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় তৈরি হচ্ছে সীমান্ত সড়ক। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অনুমোদিত কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সোমবার দুপুরে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম দুমদুম্যা ইউনিয়নের সাইসল আর্মি ক্যাম্প এলাকায় প্রকল্পটির কাজ পরিদর্শন করেন তিনি।

নির্মাণাধীন এই সড়ক যুক্ত করেছে বিলাইছড়ির দুর্গম ফারুয়া, জুরাছড়ির দুমদুম্যাকে। প্রথম পর্যায়ের অনুমোদিত ৩১৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৯৫ কিলোমিটার। চলমান রয়েছে ১৩২ কিলোমিটার কাজ যা এই বছরের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাকি ৯০ কিলোমিটার কাজ অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীন ১৬, ২০ এবং অ্যাডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

পরিদর্শন কালে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে অনেকগুলো কাজ আমরা করছি। যার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ। এই সড়ক নির্মাণের কাজের অগ্রগতি দেখে আমি যথেষ্ট খুশি। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ শেষ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় এই অঞ্চলে কাজ করা কঠিন। এই কঠিন কাজটি সেনাবাহিনীর সদস্যরা কতটা কষ্ট করে করছেন তা আপনারা দেখেছেন। একই সঙ্গে এই কাজের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের মনোবল বাড়াতেও আমার এই সফর। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক না থাকা এই অঞ্চলে কর্মরত সেনা সদস্যদের কাজের মনোবল বাড়াতে আমার এই ভিজিট।’

রাজস্থলী থেকে দুমদুম্যা যাওয়ার পথে দেখা যায়, পাহাড়ের বুক চিরে এঁকেবেঁকে চলে গেছে সড়ক। এই চলার পথে রয়েছে শুধুই পাহাড় আর পাহাড়। কোথাও ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। ড্রোজারে কাটা হচ্ছে মাটি। কোথাও কঠিন শিলা ভাঙছে হাইড্রোলিক হ্যামার। কোথাও-বা রোলার করা হচ্ছে। কেউ-বা করছে কারপেটিং। দুর্গম পাহাড়ে এভাবেই বিরামহীন গতিতে সীমান্ত সড়কের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

প্রকল্পটির অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ আর অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৪.১৬ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য জেলাগুলোর সীমান্ত এলাকায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সীমান্তের দুই পাশের অবৈধ অস্ত্র, মাদক, মানবপাচার যেমন বন্ধ হবে, তেমনি পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে এবং সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের জন্য সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান ব্যবস্থা।

এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকার দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি সড়কটি উন্নত জাতের কৃষি বীজ পৌঁছানোর মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। পার্বত্য এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিতেও এই সড়কটি ভূমিকা রাখবে।

রাজস্থলীর বাসিন্দা উচিং মারমা বলেন, ‘এই সড়কের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে। তেমনি পর্যটকের আনাগোনাও বাড়বে। যার মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পুচিং মং জানান, এই সড়কের মাধ্যমে কৃষিজ পণ্যের বাজারজাতকরণে সুবিধা হবে এবং কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

পরিদর্শনকালে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম এরিয়া মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, সেনাসদর ও স্থানীয় ফরমেশনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সেনাসদস্য এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।