মাছধরা ট্রলারে জলদস্যুদের হামলা

চার জেলে উদ্ধার, সন্ধান মেলেনি ৫ জনের

বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের হামলার সময় প্রাণে বাঁচতে গিয়ে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ নয় জেলের মধ্যে চার জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। মাছ শিকারে যাওয়ার পথে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর থেকে পশ্চিমে বয়া এলাকার এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচ জেলে। তবে উদ্ধার হওয়া জেলেদের দাবি, নিখোঁজ পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের নদীতে ভাসমান অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।  

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।

এর আগে রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ‘এফবি মা মরিয়ম’ নামে এক মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা তাদের গভীর সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে।

উদ্ধার জেলেরা হলেন– বরগুনা সদর উপজেলার নলী এলাকার মাহাতাবের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৭), শফিকুল মাঝি (৪৭), তালতলী উপজেলার চামুপাড়া এলাকার মানিক জোমাদ্দারের ছেলে ইয়াসিন জোমাদ্দার (৪০), আসমত আলীর ছেলে আব্দুল হাই (৩৭)।

ফিরে আসা জেলেরা জানান, নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে চার জন জেলে তাদের সামনেই মারা গেছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মারা যাওয়া জেলেদের নাম পাওয়া যায়নি।

উদ্ধার জেলে ইয়াসিন জানান, ডাকাত দলের মার খেয়ে সাগরে পড়ে গিয়ে তারা নয় জন জেলে একটি বয়া ধরে ৭০ ঘণ্টা ভেসে ছিলেন। এরপর একটি জালে আটকে যান তারা। এর আগে তার বড় ভাই কাইয়ুম জোমাদ্দার সাগরে ভাসমান অবস্থায় তার হাতেই মারা যান। এভাবে একে একে আরও চার জন মারা গেলে তাদের সাগরে ভাসিয়ে দেন তারা।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, কালমেঘা এলাকার মালিক ও মাঝি মাকসুদ মিয়ার ‘এফবি মা মরিয়ম’ ট্রলারটি সাগরে জাল ফেলে অপেক্ষা করছিল। সেই ট্রলারের জেলেরা ভাসমান জেলেদের দেখে রবিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ওপরে তুলে আনেন। পরে মাছের খাল এলাকার ‘এফবি নিশান’ নামে একটি ট্রলারে উদ্ধার জেলেদের পাথরঘাটার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে উদ্ধার জেলেদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ফিরে আসা চার জেলের সামনেই ভাসমান অবস্থায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাড়ি বরগুনা জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, ‘আহত অবস্থায় চার জেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে এবং শরীরে দুর্বলতা দেখা গেছে। আমরা আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘জেলে উদ্ধারের বিষয়ে ডিসি স্যার অবহিত আছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং উদ্ধার জেলেদের জন্য শুকনো খাবার, গরম কম্বল এবং চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ফিরে আসা জেলেদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন নজর রাখছে।’

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার এম মেহেদী হাসান জানান, বঙ্গোপসাগরে ডাকাতের হামলার ঘটনায় নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তাদের মধ্যে চার জনকে জীবিত উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাকি জেলেদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার পথে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পায়রা বন্দর থেকে পশ্চিমে বয়া এলাকায় দস্যুরা হামলা করে। এ সময় নয় জেলেকে জিম্মি করে ট্রলারে থাকা মালামাল লুটে নেয় ডাকাতরা। এ ছাড়াও নয় জেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়।