‘শষ্যভান্ডার’ খ্যাত দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ওই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়। লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষক সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু এবার ভালো দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচও না উঠায় বিপাকে পড়েছেন তারা। দাম খুব কম হওয়ায় ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না কৃষকরা। এজন্য ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে বহু কষ্ট ও অর্থব্যয়ে আবাদ করা ফুলকপি-বাঁধাকপি।
বিরামপুর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক হামিদুল ইসলাম। ২০১৯ সালে ‘শ্রেষ্ঠ সবজি চাষি’র পুরস্কার পান তিনি। এ বছর সবজি চাষ করে লোকশানের মুখে পড়েছেন হামিদুল। ভালো দাম না পাওয়ায় ক্ষেত থেকে সবজি তোলা বন্ধ করেছেন তিনি। তার মতোই অবস্থা ওই গ্রামের অন্য সবজি চাষিদেরও। কেউ কেউ গরুকে খাওয়ানোর জন্য ক্ষেত থেকে ফুলকপি-বাঁধাকপি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক কৃষক সেগুলো কেটে ফেলে দিচ্ছেন। আবার কেউ পাওয়ার টিলার চালিয়ে নষ্ট করছেন।
অপর কৃষক মশিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতবছর সবজির ভালো দাম ছিল। কিন্তু এবার সবজি চাষ করে আমাদের কৃষকদের মাথায় হাত। বাজারে সবজির কোনও দাম নেই, অথচ গতবছরের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ বেশি। এক বিঘা জমিতে ফুলকপি-বাঁধাকপি আবাদ করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ, কিন্তু ২ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করতে পারিনি। বাজারে কেউ এসব নিতেই চাচ্ছে না। না নিলে আর কাকে দেবো। তাই বাধ্য হয়ে পাওয়ার টিলার চালিয়ে জমিতে থাকা ফুলকপি-বাঁধাকপি নষ্ট করে দিচ্ছি। কারণ জমি তো পরিষ্কার করতে হবে, অন্য কিছু আবার লাগাতে হবে।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ফুলকপি ও বাধাকপিই সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে মাঠে যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি রয়েছে সেগুলো তৃতীয় পর্যায়ে রোপণ করা সবজি। প্রথম দুই ধাপে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পেয়েছে। তৃতীয় ধাপে এসে মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় চাহিদা কমেছে। এজন্য দাম কমতির দিকে থাকায় বর্তমানে কৃষকরা সবজির দাম পাচ্ছেন না। তবে তারা এসব সবজি যদি ঢাকা ও অন্য জায়গায় নিতে চান যেখানে ভালো দাম রয়েছে, সেক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’