রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন গ্রেফতার

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। রবিবার (১২ মার্চ) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় এই মামলাটি করেছেন। মামলার পর তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তসলিম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের বাসের চেইন মাস্টার হিসেবে কর্মরত। তিনি নগরীর খোঁজাপুর এলাকার বাসিন্দা।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় বাসের চেইন মাস্টার তসলিমের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। মামলা হওয়ার পরে বিনোদপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এখনও থেমে থেমে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা চলছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দিনে রবিবার (১১ মার্চ) সকালে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের আলোচনার জন্য বসতে আহ্বান জানালেও তারা সাড়া দেননি। উপরন্তু কয়েকটি দাবি তুলে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

অপরদিকে, সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছুসংখ্যক এলাকাবাসীর অপ্রীতিকর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মর্মাহত। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সন্ধ্যায় বিনোদপুর গেট সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলাকাবাসী ও পুলিশের কতিপয় সদস্যের এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, সে বিষয়ে উপাচার্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে স্থানীয় মতিহার থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী বিনোদপুর ও আশপাশের মেসে অবস্থান করছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর আছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাবি প্রশাসন মেস মালিক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। কর্তৃপক্ষ মনে করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তাদের পরামর্শ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। অতীতে এ রকম পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের শান্ত থেকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায়।

প্রসঙ্গত, শনিবার (১১ মার্চ) বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিটে বসাকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ঘটনার পরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।