কাকটি যেভাবে বন্ধু হলো তারেকের

আস্থা বা বিশ্বাসের জায়গা থেকে প্রকৃত বন্ধু হয়ে ওঠা কঠিন। খুব সহজেই মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে তার প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু প্রাণীরা একবার কাউকে বিশ্বাস করলে সহজে তাকে ছেড়ে যায় না। এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে খুব সহজে পোষ না মানা পাখি কাক মানুষের বন্ধু হয়ে সাড়া ফেলেছে বাগেরহাটের মোংলায়।

জানা গেছে, মোংলা পৌর শহরের জয়বাংলা সড়কের বাসিন্দা মো. সুলতানের ছেলে তারেক বিন সুলতান নামে এক যুবক বছর খানেক আগে আহত একটি কাক বাসায় নিয়ে আসেন। সুস্থ হয়ে সেই কাক বন্ধু হয়ে থেকে যায় তার বাসায়। কাকটি আলাদা আলাদা মানুষের মুখের আকৃতি মনে রাখতে পারে। এ ছাড়া অন্য প্রাণীদের অনুকরণ করার পাশাপাশি মানুষকে অনুকরণ করতেও পারে। কাক সাধারণত সারাজীবন একই সঙ্গীর সঙ্গে থাকে।

তারেক বাংলা ট্রিউনকে বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে একটি কাকের বাচ্চা গাছের নিচে পড়ে থাকতে দেখি। কাছে গিয়ে দেখি বাচ্চা কাকটি আহত। বাসায় নিয়ে এসে চিকিৎসা দিই। প্রায় ১৫ দিনের মধ্যে কাকটি সুস্থ হয়ে ওঠে। ভেবেছিলাম, সুস্থ হওয়ার পর কাকটি ফিরে যাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো। পাখিটির সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যে কারণে প্রায় এক বছর হলেও কাকটি যায়নি।’

তারেক আরও বলেন, ‘মানবিক দায়িত্ব থেকে আহত কাকটিকে চিকিৎসা দিই। তবে বন্ধুত্বের ব্যাপারে ভাবিনি। কাকটি প্রায় এক বছর ধরে আমার সঙ্গেই আছে। আমি তাকে সিদ্ধ ডিম, মাছ ও মাংস খেতে দিই। সারাদিন আকাশে ঘুরে বেড়িয়ে আবার বাসায় ফিরে আসে।’

তারেক কোথাও গেলে কাকটি তাকে অনুসরণ করেকাকের সঙ্গে তারেকের বন্ধুত্বের একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ভিডিওতে দেখা যায়, তারেকের মুখে কোনও খাবার নিয়ে কাকটিকে খেতে দিলে কাকটি তার মুখ থেকে সেই খাবারও খাচ্ছে। এমনকি তারেক কোথাও গেলে কাক পাখিটি তাকে অনুসরণ করছে।

তারেক বলেন, ‘কাকটিকে আটকে রাখতে চাই না। বরং উড়ে যাওয়ার জন্য পাখিটিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি।’

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘যেকোনও বন্যপ্রাণী সব সময় তার নিরাপত্তা এবং খাদ্য চায়। এটি যদি সঠিকভাবে করা হয় তাহলে তারা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়।’ 

কাক সব সময় পুরোপুরি বিশ্বস্ত হয় না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কাক একটি চতুর পাখি। কোনও কাক মারা যাওয়ার পর সম্ভাব্য হুমকি খুঁজতে সেই অঞ্চল তদন্ত করতে থাকে। তারা অন্য কাকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, যদি তারা বুঝতে পারে যে মানুষটির সঙ্গে রয়েছে সে মানুষটি বিপজ্জনক।’