যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার অপরাধে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে যৌতুক আদায়ের জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের রেছনা বেগমের মেয়ে মনমালা বেগমের (২২) সঙ্গে একই গ্রামের রাসেল মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পরে স্বামী রাসেল মিয়া স্ত্রীর কাছে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। না পেয়ে যৌতুকের টাকা আদায়ের জন্য নিয়মিত মারধর করে। এ নিয়ে জামালগঞ্জ থানায় মনমালার মা রেছনা বেগম বাদী হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি মামলা করেন। পরে উভয় পরিবারের সালিশি বৈঠকে পারিবারিকভাবে আপস-নিষ্পত্তির মাধ্যমে রাসেল মিয়া মামলা থেকে মুক্তি পায়। ২০১৮ সালের ২৮ জুন মনমালা অসুস্থ চাচাকে দেখার জন্য তার বাড়িতে যান। ওইদিন রাতে রাসেল মনমালাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। রাতে যৌতুক আদায়ের জন্য রাসেল এবং তার পরিবারের সদস্যরা মনমালাকে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ ঘরে রেখে স্বপরিবারে পালিয়ে যায়। নিহত মনমালার স্বজন এবং জামালগঞ্জ থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার সময় নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।

এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রেছনা বেগম বাদী হয়ে প্রধান আসামি রাসেল মিয়া, মনমালার শ্বশুর কবিরফুল ও ভাসুর সফিক মিয়ার বিরোদ্ধে জামালগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতে আসামি রাসেল মিয়া ১৬৪ ধারার জবান্দিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। মামলা তদন্ত কর্মকর্তা জামালগঞ্জ থানার এসআই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডিও আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় ডাক্তার, পুলিশ ও নিহতের স্বজনসহ নয় জনের সাক্ষ্য-প্রমাণে বিষয়টি আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসামির উপস্থিতিতে আজ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিকে সুনামগঞ্জে জেলা কারাগারে পাঠান আদালত।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নান্টু রায় জানান, আদালতের রায়ে বাদীপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী নাসিরুল হক আফিন্দি জানান, আসামিপক্ষ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন। তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবে।