টানা ৭ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, বিপর্যস্ত জনজীবন

একটানা সাত দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। আজ সোমবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এখানে। সোমবার দুপুরে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মাসে তাপমাত্রা বেড়েছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে।

জেলায় মাঝারি দাপদাহ বয়ে চলেছে। প্রচণ্ড দাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

গত শীতে বেশ পরপর কয়েকদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গা। সে সময় তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতকাল শেষ হতে না হতেই গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। জেলাটিতে গরমের তীব্রতায় ছোটবড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা।  একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে গা এলিয়ে দিচ্ছেন পথচারীরা।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র দাবদাহে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। তবে খেটে খাওয়া মানুষরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। তাদের অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন।

আলফাজ উদ্দিন নামের ভ্যানচালক বলেন, ‘সকালে একটু ভাড়া হচ্ছে। এরপর রোদ উঠলে আর ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বসে থাকছি।’

দিনমজুর করিম মিয়া বলেন, ‘রোদে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। একটু কাজ করছি আবার গাছের নিচে এসে জিরিয়ে নিচ্ছি।’

সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। দুপুরের পর আগুন ঝরা রোদের তেজে সাধারণ মানুষের বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। 

গরমের প্রভাব পড়েছে জেলার ব্যবসা বাণিজ্যেও। প্রচণ্ড গরমে বাজারমুখী হচ্ছে না মানুষ। ক্রেতা সমাগম না থাকায় ঈদবাজার এখনও জমে ওঠেনি।

চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী নিহার চক্রবর্তী জানান, এই প্রচণ্ড গরমে বাজারে আসছে না মানুষ। ঈদ উপলক্ষে বেচা বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। এ সময় অন্য বছরগুলোতে বেশি বেচা-বিক্রি হতো। এবার ব্যবসায় মন্দাভাব।

কয়েকদিনের প্রচণ্ড তাপমাত্রায় মাঠে ভুট্টাসহ নানা ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। গরমে শ্রমিকের অভাবে মাঠে ভুট্টা ঝলসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন।

ধানচাষি সোহান বলেন, ‘বোরোর ভরা মৌসুমে তীব্র খরা। প্রতিদিন ধানে সেচ দিতে হচ্ছে। বৃষ্টি নেই। সেচ না দিলে ফলন হবে না। ডিজেলের দাম বেশি । খুব বিপদে আছি।’

এদিকে, ভ্যাপসা গরমে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. এএসএম ফাতেহ্ আকরাম বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত নানা কারণে এই সময়ে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হয়। গরমের মৌসুমের এই সময়ে শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর দিতে হবে।’

আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে হিমালয় থেকে আসা হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা জানান দেয়। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গার খুব কাছে কর্কটক্রান্তি রেখা, যার কারণে শীতের সময় শীত বেশি, আর গরমের সময় গরম। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে এই তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

প্রখর এই দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতির বৃষ্টির আশায় বুক বেঁধে আছেন মানুষ।