তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তার পানি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।

এরই ধারবাহিকতায় শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় বন্যার পানি আরও ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। বন্যার পানি বাড়া কমার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম (গেজ পাঠক)।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ও ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার (৫২ দশমিক ৩৪) ওপর দিয়ে ও বিকাল ৩টায় দুই সেন্টিমিটার কমে তা বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এদিকে, জেলার ডিমলায় পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি ও খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ১৫ গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এসব পরিবারের মধ্যে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘বুধবার রাত থেকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এতে বৃহস্পতিবার সকালে ইউনিয়নের পূর্বছাতনাই এবং ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। দুপুর ১২টায় পানি কিছুটা কমলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। বিকাল ৩টায় ফের পানি বৃদ্ধি পেলে অনেকে নিরাপদ জায়গায় চলে যায়।’

তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে, নিন্মাঞ্চল প্লাবিতএকই উপজেলার খালিশাচাপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির ফলে ছোটখাতা ও বাইশপুকুর গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। দুপুরে পানি কিছুটা কমলেও বিকালে ফের বাড়তে শুরু করেছে। এতে বন্যা আতঙ্কে দিন যাপন করছে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার মানুষজন।’

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, উজানের ঢলে বুধবার রাতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি তীরবর্তি ১৯ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে। সকাল নয়টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকার পর বেলা ১২টায় ছয় সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকাল ৩টায় ফের চার সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহি হচ্ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট (জলকপাট) খুলে দিয়েছে পাউবো।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, ‘আজ সকাল থেকে উজানের ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা ১২টায় ছয় সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং বেলা ৩টায় খানিকটা বেড়ে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে, নিন্মাঞ্চল প্লাবিততিনি বলেন, ‘বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে তিস্তার পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। মানুষের জান মাল রক্ষার্থে সর্বদা কাজ করছে পাউবোর সকল কর্মকর্তা কর্মচারি। পরিস্থিতি স্বভাবিক রাখতে ব্যরাজের সবকটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রাখা হয়েছে।’

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের পানিবন্দি মানুষের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেটি পেলে জানা যাবে কি পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শুকনা খাবারসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। প্রয়োজন হলেই বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। পাউবো এবং উপজেলা প্রসাশন সর্বদা বানভাসি মানুষের ওপর নজর রাখছে।’