কুড়িগ্রামে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং, অতিষ্ট গ্রাহকরা

গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামে বেড়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। গত চারদিন ধরে দিন ও রাতে প্রতিঘণ্টার লোডশেডিংয়ে পড়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। 
 
লোডশডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালী কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন অনেক এলাকায় রাতে মাত্র এক থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গ্রাহকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

কুড়িগ্রাম শহরের দাদামোড়ের ওয়ার্কশপ মালিক সুজন মিয়া বলেন, ‘সারাদিনে লোডশেডিং। ঘণ্টায় ঘণ্টায় কারেন্ট যায়। মাঝে মাঝে টানা দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং চলে। দোকানে কাজ করা যাচ্ছে না। গ্রাহকদের অর্ডারের অনেক কাজ পড়ে আছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিপন সরকার নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘দিলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা দিবে কারেন্ট, ভাতটা যেন রান্না করা যায়।’

কুড়িগ্রাম শহরে খলিলগঞ্জের বাসিন্দা আরেক গ্রাহক জ্যোতি আহমেদ লোডশেডিংয়ে বিরক্ত হয়ে দীর্ঘ লেখা পোস্ট করে লিখেছেন, ‘জনসাধারণ বিরক্ত, ক্ষুদ্ধ। অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণ জানানো হচ্ছে না।.....এই আধুনিক পৃথিবীতে কুড়িগ্রাম একটি বঞ্চিত, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ! জনগণ এ অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দাবি করে।’

এদিকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে বৈদ্যুতিক পণ্যের দোকানগুলোতে রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। দিনে ও রাতে ক্রেতারা দোকনগুলোতে ভিড় করছেন। বেশিরভাগ দোকানি ফ্যানের সরবরাহ করতে পারছেন না।

শহরের ঘোষপাড়ার বৈদ্যুতিক পণ্যের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, ‘হঠাৎ গরম ও লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। গ্রাহকরা ভিড় করছেন। আমরা পণ্য থাকা সাপেক্ষে বিক্রি করছি।’

স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গত সোমবার (১৭ জুলাই) থেকে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে প্রতিঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন ৩২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত উঠছে। এই চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র সাড়ে ৬ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

নেসকো আরও জানায়, বরাদ্দ সংকটে তাদের আটটি ফিডারের সাতটিতে প্রতিঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে স্ক্যাডার অপারেশনের মাধ্যমে সরবরাহ বন্ধ করলে লোডশেডিংয়ের সময় আরও প্রলম্বিত হচ্ছে। বুধবার সারাদিনে তিনবার এবং বৃহস্পতিবার ভোরেও স্ক্যাডা অপারেশনের কারণে বিদ্যুৎহীন ছিল কুড়িগ্রাম।

নেসকো’র কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক, কখনও অর্ধেকেরও কম। ফলে লোডশেডিং চলছে। গরম না কমা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুড়িগ্রামে সার্কিট হাউজ ফিডারকে লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। ওই ফিডারের অধীন আদালত, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, কারাগার ও কিছু আবাসিক এলাকা রয়েছে। এ ছাড়া অন্য সব ফিডারে লোডশেডিং চলছে।,

কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের সঞ্চালন লাইনে লোডশেডিং চলছে।’