এখন আর পাহাড়ের পাদদেশে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না জরিনাকে

এখন আর মৃত্যুর ভয় নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না। সারাদিন কায়িক পরিশ্রম শেষে এখন আর ফুটপাত বা অন্যের ঘরে ফিরতে হবে না। ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র জরিনা খাতুনের এখন প্রতিদিন ফিরতে পারবেন নিজ ঘরে। শুধু ঘরই নয়, থাকছে নিজ নামে দুই শতক জমি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুন্দর বারান্দাসহ বসবাসের নিরাপদ সুবিধা।

বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীন ও ভূমিহীনদের উপহারের ঘর উদ্বোধন করেন। এ সময় টেকনাফের এই অসহায় নারী জরিনাকে উপহারের ঘরের দলিলপত্রসহ চাবি বুঝিয়ে দেন জেলা প্রশাসক শাহীন মুহাম্মদ ইমরান। একই সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকনাফ উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন।

‘মুজিব জন্মশতবর্ষ’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদের বিনা টাকায় ঘর উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশের মতো টেকনাফেও আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলায় এবার চতুর্থ পর্যায়ে ৬৪টি পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব বাড়ি। এর আগে এই উপজেলায় তৃতীয় পর্যায়ে ৪৫৯ পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নতুন ঘর পাওয়া এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষগুলোর চোখেমুখে এখন আনন্দ।

টেকনাফে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরবাড়ি পাওয়ার আনন্দে টেকনাফে পুরাতন পল্লানপাড়ার পাহাড়ি এলাকার বসবাসকারী ভূমি-গৃহহীন জরিনা খাতুনের চোখে আনন্দ অশ্রু। ঘর পেয়ে কেমন লাগছে, জিজ্ঞেস করায় জরিনা বলেন, ‘আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে পাহাড়ি জায়গায় কুঁড়েঘর তুলে থাকি। যেকোনও সময় পাহাড় ধসে পড়ার শঙ্কা থাকে। স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি, জমিসহ ইটের একখানা নতুন ঘর পাবো, সরকার আমাকে ইটের ঘর দেবে, এই বয়সে ইটের ঘরে থাকতে পারবো। আমি ভীষণ খুশি ঘর পেয়ে। এই রঙিন ঘরে আমরা নতুন পৃথিবী শুরু করবো। দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।’

সীমান্তের নদীর কাছাকাছি নয়াপাড়ায় পরের ঘরে আট সন্তান নিয়ে কষ্টে জীবন পার করছিলেন প্রতিবন্ধী আবদুর রহিম। তিনি বললেন, ‘সারাজীবন দুঃখ-কষ্টে গেছে, মানুষের জমিতে ঘর করে থেকেছি; বর্ষা-বৃষ্টিতে ভিজেছি। কোনোদিন বাড়ি-ঘরের স্বপ্ন ছিল না। এখন জমিসহ সেমিপাকা ঘর পেয়েছি। এখন নিজের জমি আছে, ঘর আছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমরা খুব খুশি; আল্লাহ তার ভালো করুন।’

অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, জেলা পরিষদ সদস্য জাফর আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম, সহকারী কমিশনার ভূমি এরফানুল হক চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর এবং বিজিবি, র‌্যাবের কর্মকর্তাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক শাহীন মুহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না– প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নের কাজ যেমন চলছে, তেমনি সমতলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টেকনাফ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করেছেন। তারপরও নতুন করে কোনও ভূমিহীন-গৃহহীন পাওয়া গেলে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

ইউএনও মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে আশ্রয় পাওয়াদের অধিকাংশই রাস্তার ধারে ফুটপাত বা কারও আশ্রয়ে বসবাস করতেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেলেন। এতে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।’

প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পরিবার পেয়েছে দুটি থাকার ঘর, একটি রান্না ঘর, একটি করে উন্নত টয়লেট ও স্টোর রুম। চমৎকার পরিবেশে টেকসই করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো।