বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে জেলেদের ২০ লাখ টাকার কাঁকড়া ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

সুন্দরবনে জেলেদের আহরিত ২০ লাখ টাকা মূল্যের কাঁকড়া ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে নদীতে জেলেদের নৌকায় হামলা, ভাঙচুর ও মারধরসহ ছয় জেলেকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফিরে আসা জেলেরা।

বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে মোংলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জেলেরা জানান, মঙ্গলবার ভোর রাতে চাঁদপাই রেঞ্জে নন্দবাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

লিখিত বক্তব্যে জেলে তরিকুল, ওমর গাজী, আলমঙ্গীর ও রাজিব শেখ বলেন, ‘বন বিভাগের পাস-পারমিট সংগ্রহ করে গত ১২ নভেম্বর ৪০ জন জেলে ১২টি নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের দুবলা এলাকায় কাঁকড়া আহরণ করতে যান। ২১ নভেম্বর রাতে চারটি নৌকায় ৪০ মণ কাঁকড়া নিয়ে লোকালয়ে ফিরে আসছিলেন তারা। পশুর নদীর নন্দবালা এলাকায় পৌঁছালে চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন বনরক্ষী বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে তাদের নৌকা আটক করেন।’

তারা আরও জানান, জেলেরা বৈধ অনুমতিপত্র দেখালেও বনরক্ষীরা তাদের কাছে অনৈতিকভাবে অর্থ দাবি করে এবং বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে জেলেদের মারধর ও নৌকা ভাঙচুর করেন। এ সময় ইউনুস আলী (৫৫), আজিজুল (২২), রাজ্জাক (৩০), জাহিদুল (২৩), মিজান (৩০) ও তোফাজ্জল (৩৫) নামে ছয় জেলেকে আটকসহ নৌকা, আহরিত কাঁকড়া ছিনিয়ে নেন বনরক্ষীরা। হামলা ও মারধরের সময় রুমি শেখ (১৮) ও আলমগীর (৩২) নামে অপর দুই জেলে নিখোঁজ হন।

ফিরে আসা জেলেরা বলেন, ‘সুন্দরবন ও সাগর উপকূলে কাঁকড়া আহরণ করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়লে লোকালয় থেকে নৌকা ও ট্রলার পাঠিয়ে উদ্ধার করা হয়। সেই ট্রলারটিও ভাঙচুর করে নিয়ে গেছেন বনরক্ষীরা। তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া আহরিত ৪০ মণ কাঁকড়ার (রফতানিযোগ্য) বাজার মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জেলেরা অভিযোগ করেন, ঘুষ ও অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিতে বনরক্ষীদের হাতে তাদের নির্যাতন ও হয়রানি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

অভিযোগের বিষয়ে সুন্দরবনে জেলেদের কাঁকড়া আহরণে পাস-পারমিট থাকার কথা স্বীকার করে চাঁদাপাই স্টেশন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘কাঁকড়া আহরণে বৈধতা থাকলেও অবৈধ পরিবহন ব্যবস্থার কারণে কাঁকড়া ও চারটি নৌকা, একটি ট্রলারসহ ছয় জেলেকে আটক করা হয়েছে। তবে জেলেদের মারধর করা হয়নি।’ এ ছাড়া দুই জেলে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি অবগত নয় বলেও জানান তিনি।

চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেব বলেন, ‘জেলেরা পাস দুবলায় জমা না দেওয়ায় এবং কাঁকড়া বহনে অবৈধভাবে  ব্যবহার করায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রলার ও কাঁকড়া আটক করা হয়েছে। জেলেরা বন বিভাগের অফিস ও জলযানে ইটপাটকেল ছুড়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, ‘এ ঘটনার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’