বিএনপির দুই নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, ৫ দিনে সন্ধান মেলেনি

বগুড়ার কাহালু উপজেলা বিএনপির দুই নেতাকে আইনশৃঙখলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত পাঁচ দিনে তাদের সন্ধান না মেলায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে তাদের জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে কাহালু উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

নিখোঁজ নেতারা হলেন– কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ভালতা গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের ছেলে উপজেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন হৃদয় এবং একই ইউনিয়নের মদনাই গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে আনোয়ার হোসেন হৃদয়কে শেরপুরের পল্লী উন্নয়ন একাডেমির গেট থেকে এবং রাত ৯টার দিকে দুপচাঁচিয়া সিও অফিস মোড় এলাকা থেকে দেলোয়ার হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তাদের সন্ধান মিলছে না। তাদের আদালতেও হাজির করা হয়নি।’

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেন নিখোঁজের ব্যাপারে তার ভাই কামরুজ্জামান ১৫ ডিসেম্বর থানায় জিডি করেছেন। এ ব্যাপারে একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত এই নামে কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।’

শেরপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, ‘কাহালুর বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন হৃদয় নিখোঁজের ব্যাপারে তার ভাতিজা থানায় জিডি করেছেন। আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও দেলোয়ার হোসেন নামে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এরপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি আমরা।’

এদিকে, দুই বিএনপি নেতা নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ১৭ ডিসেম্বর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করলেও এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান দেয়নি। ঘটনাটি আতঙ্কজনক। এভাবে আটক ও গুম করে রাখা নির্মম মনুষ্যত্বহীনতা এবং ভয়ানক অশুভ সংকেত। নেতাদের গ্রেফতার এবং সন্ধান না দেওয়ায় পরিবার-পরিজনসহ দলের নেতাকর্মীরা গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন।

অবিলম্বে আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও দেলোয়ার হোসেনকে জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে আওয়ামী লীগ সরকারকে এর দায় নিতে হবে।’

এ ছাড়া মঙ্গলবার বিকালে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন, কাহালু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুর রহমান ফরিদ এবং পৌর বিএনপির সভাপতি হাফিজার রহমান প্রমুখ এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা অবিলম্বে দুই নেতাকে জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর বিকালে কাহালুর তিনদীঘি বাজার এলাকায় বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবেক এমপি ও সাবেক বিএনপি নেতা ডা. জিয়াউল হক মোল্লা এবং তার কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ডা. মোল্লা কাহালু থানায় সাবেক এমপি মোশারফ হোসেনকে হুকুমের আসামি করে ৪২ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। নেতাকর্মীদের ধারণা, এই মামলার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করেছে।