‘হেরে গেলেও ভেঙে পড়িনি,’ লাইভে এসে বললেন মাহি

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে ভোট করে জামানত হারিয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। হেরে গেলেও শোডাউন করবেন বলে ভোটের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের পর অনেকটা আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের ফোনও রিসিভ করছিলেন না। তবে দুদিন পর ভোট নিয়ে মুখ খুলেছেন ঢাকাই সিনেমার এই নায়িকা। নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে তিনি বলেছেন, ‘হেরে গেলেও ভেঙে পড়িনি। কম ভোট পেলেও আমি মেয়ে হয়ে ভোট করেছি তা অ্যাপ্রিশিয়েট করা উচিত।’

সোমবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে ফেসবুক থেকে লাইভে এসব কথা বললেন মাহি।

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে।’

মাহি বলেন, ‘সবাই নিশ্চয় ভাবছেন আমার প্রচণ্ড মন খারাপ। কিছুটা তো মন খারাপ হবেই। কারণ আমি হেরে গেছি গেমে। নির্বাচন একটা গেম। মন খারাপ কিছুটা, কিন্তু সেরকম কিছু না। প্রতিটি সিচ্যুয়েশনেই আগে নেগেটিভ বিষয়টি মাথায় রাখি, নেগেটিভ হতেই পারে। প্রতিটি সিচুয়েশনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। ইশতেহারে বলা, নারীদের ঘর হবে একেকটা কর্মসংস্থান ও তরুণরা হবেন উদ্যোক্তা। এসব কতটা বড় পরিসরে করতে পারবো, এটি সরকারিভাবে যতটা সম্ভব, ব্যক্তিগতভাবে তা চ্যালেঞ্জিং। তারপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে যথেষ্ট চেষ্টা করবো।’

ফেসবুকে বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘এই তানোর-গোদাগাড়ীর রাস্তা-ঘাটের যে বেহাল অবস্থা, সারা দেশের রাস্তা যত উন্নত, সেখানে আমার তানোর-গোদাগাড়ীতে এখনও গরুর গাড়ি চলার মতো অবস্থা। বৃষ্টি ও বর্ষার সময় হাঁটু কাদা হয়ে যায়। সেই রাস্তাঘাট এবং বরেন্দ্রভূমির যে পানির সমস্যা, এই দুটো বিষয়ে দৃষ্টি দেবেন। যিনি নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছেন, গত ১৫ বছরে যেসব উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি, সেসব এই পাঁচ বছরে যেন তিনি করেন।’

এ সময় আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী এবং নির্বাচিত প্রার্থীর সমালোচনা করেন এই অভিনেত্রী। বলেন, ‘গত ১৫ বছরে তার যে জনপ্রিয়তা কমে এসেছিল, তা যেন এই পাঁচ বছরে কাটিয়ে ওঠেন তিনি। আমি কিন্তু মাঠে আছি। তা না হলে আগামী পাঁচ বছর পর ফের নির্বাচনি মাঠে দেখা হবে। তার তো জনপ্রিয়তা শূন্য। যতটা ভোট পেয়েছেন সেটা নৌকার জন্য। তো আপনাদের এত খুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই।’

নায়িকা মাহি আরও বলেন, ‘আমার জন্য মাঠে যারা কাজ করেছেন, আগামী পাঁচ বছরে আমার জন্য যারা কাজ করবেন, সেসব কর্মী-সমর্থকদের আপনারা (ক্ষমতাশীন) যদি কোনোরকম ডিস্টার্ব করেন, তাহলে মনে রাখবেন, আমি কিন্তু দুর্বল না। আমি মানসিকভাবে যতটা শক্তিশালী, কর্মীদের ন্যূনতম অপমানেও আমি সর্বোচ্চ লড়াই করবো। যে কর্মীরা আমার জন্য কাজ করেছেন, তাদের জন্য দরকার হলে আমি জানও দিতে পারি।’

মাহি আরও বলেন, ‘পাঁচ বছরে আপনারা (নির্বাচিত প্রার্থী) এমন এমন কাজ করবেন, যাতে মানুষের হৃদয়ে আপনাদের জায়গা হয়। যিনি নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন, তার প্রতি আমার পরামর্শ– আপনারা মানুষের উপকারের জন্য যে সুপ্রিম পাওয়ার পেয়েছেন পাঁচ বছরের জন্য, সেটি কাজে লাগাবেন।’

উল্লেখ্য রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী এক লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে আবারও বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট। আর নায়িকা মাহি পেয়েছেন মাত্র ৯ হাজার ৯ ভোট। ১৭টি কেন্দ্রে কোনও ভোটই পাননি মাহি। ফলে নির্বাচন কমিশনের শর্ত মোতাবেক ভোট না পাওয়ায় জামানতও হারালেন তিনি। মাহিয়া মাহি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনি প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রচারণায় বক্তব্যে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে কখনও ‘জমিদার সাহেব’, কখনও ‘চৌধুরী সাহেব’ সম্বোধন করে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। বক্তব্যে বারবার তিনি ‘অত্যাচারী জমিদার’ উল্লেখ করেছেন। সিনেমা স্টাইলে বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, ‘চৌধুরী সাহেবের টাকা আছে কিন্তু মন নেই।’ আবার বলেছেন, ‘৭ জানুয়ারি চৌধুরীকে কাঁদাতে হবে।’ আওয়ামী লীগের নেতারাও তাকে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে সিনেমায় মনোযোগ দিতে পরামর্শ দেন।