এক গ্রামে অর্ধশতাধিক পাখির মৃত্যু

গাজীপুরের শ্রীপুরে হঠাৎ অর্ধশতাধিক পাখির মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া পাখির মধ্যে বেশির ভাগই ঘুঘু। এ ছাড়া শালিকসহ বিভিন্ন জাতের পাখি রয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সিটপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, এত পাখি একসঙ্গে মারা যাওয়ার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) ছড়িয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সিটপাড়া ও আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সের লোকজন পাখি দেখতে ওই গ্রামে ভিড় করছেন। গত কয়েকদিন এলাকায় কোনও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়নি, তাহলে পাখিগুলো কেন মারা গেছে? এ প্রশ্ন তাদের।

বরমী ইউনিয়নের সিটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আসাদ মিয়া বলেন, ‘আমি সকালে কর্মস্থলে (কারখানায়) চলে যাই। দুই ঘণ্টা পর চা বিরতির সময় কারখানা থেকে বাইরে বের হলে দেখতে পাই, কয়েকজন নারী ও শিশু মারা যাওয়া পাখিগুলো এনে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখছে। পরে সেগুলোর ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) পোস্ট করেছি।’

সিটপাড়া গ্রামের শিশু তাওহিদ (৮) বলে, ‘আমি সকাল ৯টার দিকে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ওপর থেকে একটা পাখি আমার সামনে এসে পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গেই গজারি গাছ থেকে আরও পাখি নিচে পড়ে যায়। গজারি গাছের পাশের আরেকটা গাছ থেকেও পাখি পড়েছে। আমগাছ থেকে পড়েছে আরও দুটি। পাখিগুলো কুড়িয়ে এনে একটা জায়গায় রেখেছি। কয়েকটা পাখির মুখ দিয়ে পানি ঝরতে দেখেছি।’

স্থানীয় সামাদ মিয়া বলেন, ‘পাখিগুলো কীটনাশক খেয়ে মরেছে কিনা তা জানতে হবে। হঠাৎ পাখিগুলো মরে যাওয়ার কথা না। এত পাখির মৃত্যু দেখে কষ্ট লাগছে।’

গাজীপুর পরিবেশ আন্দোলন সভাপতি ফেডরিক মুকুল বিশ্বাস বলেন, ‘পাখি মারা যাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো। বিষয়টি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানাতে হবে।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী জানান, এরকম লক্ষণ সাধারণত বিষক্রিয়ায় হয়ে থাকে। যেমন কোনও জমির আগাছা ও ঘাস মারার জন্য অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে অথবা আশপাশের কোনও জমানো পানিতে কীটনাশক ব্যবহার করে থাকলে তা খেয়ে পাখিগুলো মারা যেতে পারে। তা ছাড়া আশপাশে কোনও স্থানে যদি কোনও কারখানা থাকে, সেখান থেকে নির্গত পানির সঙ্গে অতিরিক্ত কেমিক্যাল খেয়েও পাখিগুলো মারা যেতে পারে।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা হারুন-অর রশিদ খন্দকার বলেন, ‘সিটপাড়া গ্রামে গার্ডেনিয়া ওয়্যারস লিমিটেড (পোশাক তৈরি কারখানা) রয়েছে। ওই কারখানার পাশেই পাখিগুলো মারা গেছে। কেন এত পাখি মারা গেছে জানার চেষ্টা করছি।’

ঢাকা বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘কারখানার কোনও প্রভাবে পাখি মরছে কিনা তা দেখতে হবে। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’