স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে আব্রাহাম বললেন: ‘এ অর্জন জনপদের মানুষের’

একুশে পদকের পর এবার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর, কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা এসএম আব্রাহাম লিংকন। তবে এই অর্জনের কৃতিত্ব তিনি উত্তর জনপদের মানুষকে উৎসর্গ করেছেন।

স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘এ অর্জন আমার নয়, এ অর্জন উত্তর জনপদের মানুষের, আমাদের পূর্ব পুরুষদের। তারা যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো সম্মান হয়ে আমার হাত ধরে এসেছে। কৃতিত্ব তাদের, আমার নয়।’

শুক্রবার (১৫ মার্চ) স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত ১০ বিশিষ্টজনের নাম প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনীতি) জাহেদা পারভীন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তালিকায় সমাজসেবা/ জনসেবা ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আব্রাহাম লিংকনকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪’ প্রদানের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এর আগে একই ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০২২ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করে সরকার। যদিও পরে ওই পদক ও অর্থ নিজ প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে দান করেন লিংকন।

আব্রাহাম লিংকনের বাড়ি জেলা শহরের নাজিরা ব্যাপারি পাড়ায়। সেই বসতবাড়িতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। দোতলা বাসভবনের বসার ঘর, খাবারের ঘর, এমনকি শোবার ঘরেও সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দুই হাজারেরও বেশি প্রামাণ্য দলিল ও উপকরণ। লিংকনের বাসভবনের পাশে তারই দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া বরাদ্দে জাদুঘরের চারতলা ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

নিজের কর্ম প্রসঙ্গে এই সমাজসেবক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করছি। লড়াই সংগ্রাম করেছি। উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কাজ করেছি। এই অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সংগ্রহশালা “উত্তরবঙ্গ জাদুঘর” গড়ে তুলেছি। কিন্তু সবকিছু হয়েছে এ জনপদের মানুষের রেখে যাওয়া কর্মের ওপর। তাই এ প্রাপ্তি আমার নয়, তাদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দেশে শহীদ আইনজীবীদের নিয়ে কাজ হয়নি। আমি সামগ্রিকভাবে সেটি তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পর জেলখানাগুলোতে বিদ্রোহ হয়েছিল। সেগুলো নিয়ে কাজ হয়নি। আমি করেছি। এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে রয়েছে। বাকিগুলো আপনারা মূল্যায়ন করবেন।’

আইন পেশা ও রাজনীতির বাইরে সমাজসেবায় আব্রাহাম লিংকনকে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগান তার স্ত্রী নাজমুন নাহার সুইটি। স্বামীর এই অনন্য প্রাপ্তিতে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের প্রতি, যারা এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্ত্রী হিসেবে আমি গর্বিত।’

‘প্রত্যন্ত একটি এলাকায় একজন মানুষ নিভৃতে কাজ করছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল যে সেটা দেখেছেন এবং মূল্যায়ন করেছেন, সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা লিংকনের কর্মকে মূল্যায়ন করেন, যারা শুভাকাক্সক্ষী ও দর্শনার্থী হয়ে তার কাজগুলো দেখেন, এ অর্জনে তাদের কৃতিত্ব সমান।’ যোগ করেন সুইটি।

সংসার জীবনের সময় থেকে সমাজ ও মানুষের জন্য স্বামীর সময় ব্যয় করা প্রসঙ্গে সুইটি বলেন, ‘আইন পেশার কাজ অল্প সময়ে শেষ করে লিংকন লেখালেখি ও সমাজসেবামূলক কাজেই বেশি সময় ব্যয় করেন। তিনি কাজপাগল মানুষ। বাইরে থেকে সেটি কেউ বুঝতে পারবেন না। আমি পাশে থাকি বলে আমি জানি তিনি কতটা কাজপাগল। আমি তাতে বিরক্ত হই না, বরং অ্যাপ্রিশিয়েট করি।’

আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রাম সীমান্তে আলোচিত ফেলানী হত্যাকাণ্ডে বিএসএফ কর্তৃক গঠিত আদালতে ফেলানীর বাবার আইন পরামর্শক ছিলেন। মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে এই আইনজীবীর। বর্তমানে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি), কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।