অপহরণের ২২ দিন পর মাদ্রাসাছাত্র উদ্ধার, আট রোহিঙ্গাসহ গ্রেফতার ১৭

কক্সবাজার টেকনাফ থেকে অপহরণের ২২ দিন পর মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে (৬) কুমিল্লার লালমাই থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আট জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তারা পরিবারের সদস্যরা মিলে গড়ে তুলেছে অপহরণ চক্র।

রবিবার (৩১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ মডেল থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন, উখিয়া-টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাতে কুমিলার লালমাই থেকে মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদকে উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৯ মার্চ টেকনাফের হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।

ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ টেকনাফের হ্নীলার পূর্ব পানখালী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা (রা.) মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

গ্রেফতার ১৭ জনের মধ্যে রয়েছে- টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রয়েছেন নাগু ডাকাত (৫৫), তার ছেলে আনোয়ার সাদেক (২১), সাদেকের স্ত্রী হোসনে আরা (২০), নাগু ডাকাতের ভাই মোহাম্মদ হাশেম (২৭), নাগু ডাকাতের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৩২), ওই ক্যাম্পের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ খানের স্ত্রী উম্মে সালমা (২৪), সৈয়দুল হকের স্ত্রী খাতিজাতুল কোবরা (৩৫), নাগু ডাকাতের এক কিশোর ছেলে। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিরপাড়ার পুরাতন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জাফর আলমের ছেলে নাসির আলম (২৮)। এ ছাড়া রয়েছে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মাইস্যাঘোনা এলাকার মনছুর আলমের ছেলে সালামত উল্লাহ সোনাইয়া (৪৫), তার ছেলে মো.  আমির হোসেন (২৪), একই ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার মৃত কালামিয়ার ছেলে জহির আহমেদ (৬৫), শামসুল আলমের ছেলে হাসমুল করিম তোহা (২০) ও তৌহিদুল ইসলাম তোহা (৩০), সামিরাঘোনা এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ (১৯), তার বাবা ফরিদুল আলম খান (৫২)।

গ্রেফতার আনোয়ার সাদেক এই অপহরণ চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করে আসছিল বলে দাবি করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল আহমেদ। তিনি জানান, ৯ মার্চ সকালে ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ প্রতিদিনের মতো টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় আবু হুরাইরা (রা.) মাদ্রাসায় পড়তে যায়। দুপুরে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে শিশুটিকে থামিয়ে দুর্ঘটনায় মায়ের মাথা ফেটে গেছে বলে জানায় বোরকা পরিহিত অজ্ঞাত এক নারী। পরে ওই নারী শিশুটিকে ফুসলিয়ে একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে শিশুর মা নুরজাহান বেগম থানায় লিখিতভাবে অবহিত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। পুলিশ ১০ মার্চ অভিযান চালিয়ে অপহরণ ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্যসহ চক্রের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। তারা সবাই রোহিঙ্গা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, ‘পরিবার সদস্য, আত্মীয়দের নিয়ে গঠিত অপহরণ চক্রের প্রধান সাদেকের পরিকল্পনায় আসামি উম্মে সালমা সৌদি আরব প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছিল। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর ছোয়াদের সঙ্গে পরিচয় এবং সখ্য তৈরি করে। কিছুদিন পর উম্মে সালমা চলে গিয়ে অপহরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এরপর রাত-দিন অভিযানে ২২ দিন পর পুলিশ অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি পুরো চক্রের সদস্যদের আটক করা সম্ভব হয়েছে।’

ওসি ওসমান গনি বলেন, ‘পুলিশ অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের অভিযান শুরু করলে অপহরণ চক্রের সদস্যরা শিশুটি নিয়ে একের পর এক স্থান পরিবর্তন শুরু করে। প্রথমে টেকনাফ থেকে অপহরণের পর শিশুটিকে ঈদগাঁও এলাকায় রাখা হয়। ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার গহিন পাহাড়ে। এরপর পুলিশ অভিযান টের পেয়ে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।’

মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা পৌঁছে দেওয়ার কৌশলে নিয়ে শনিবার দুপুরে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে ছোয়াদকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে বলে ওসি জানান।