যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুলিশের হেফাজত থেকে জুয়েল খান (২৭) নামে হত্যা মামলার এক আসামি পালিয়ে গেছেন। রবিবার (১৮ মে) বেলা পৌনে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
পলাতক জুয়েলকে ধরতে যশোর শহরে ঢোকা ও বের হওয়ার সব রাস্তায় বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। ঘটনা তদন্তে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পলাতক জুয়েল খান (২৬) মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার রামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর খানের ছেলে। তিনি যশোরের বাঘারপাড়া থানার একটি হত্যা মামলার (মামলা নম্বর-৬, তারিখ-১১/১২/২০২১, ধারা-দণ্ডবিধির ৩৯২/২০১/৩৪) আসামি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই মামলার আসামি জুয়েল ও হারুনুর রশিদকে আজ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে শুনানি শেষে দ্বিতীয় তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচতলার হাজতখানায় আনার সময় হ্যান্ডকাফ ছাড়িয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান জুয়েল। ওই দুই আসামিকে হাজতখানায় আনছিলেন পুলিশ কনস্টেবল সোনালি আক্তার। তিনি পলায়নপর জুয়েলকে আটকাতে পারেননি। পরে তিনি অন্য আসামি হারুনুর রশিদকে হাজতখানায় রেখে কোর্ট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই আলম সিদ্দিকীসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘পলাতক আসামি জুয়েলকে ধরতে যশোর শহরে ঢোকা ও বের হওয়ার সব রাস্তায় বিশেষ পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর পুলিশকেও ঘটনাটি জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
একজন নারী কনস্টেবলকে কেন হত্যা মামলার দুই আসামিকে হাজতখানায় নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হলো, এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই আলম সিদ্দিকী জানান, ‘ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন এই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাশার সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ঢাকার পথে রয়েছেন। তদন্ত কমিটির বিষয়ে এখনও কিছু জানেন না।
আসামি পলায়নের ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুয়েল ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর আল আমিন নামে এক চালকের ইজিবাইক ভাড়া করে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বুধোপুর গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে তাকে হত্যা করে এবং ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যান জুয়েল ও তার সহযোগীরা।
মামলার তদন্তে র্যাব-৬ খুলনার একটি বিশেষ দল জুয়েলসহ চার জনকে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে। তারা হত্যার ঘটনা স্বীকার করেন এবং তাদের কাছ থেকে আল-আমিনের ইজিবাইকের ব্যাটারি, চাকা ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে জুয়েল যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, রবিবার ছিল মামলার ধার্য তারিখ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জুয়েল ও হারুন অর রশিদকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে ফেরত পাঠানোর আদেশ দেন। নারী পুলিশ কনস্টেবল সোনালি তাদের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় জুয়েল হাতকড়া ভেঙে পালিয়ে যান। কনস্টেবলের চিৎকার শুনে সেখানে থাকা লোকজন ধাওয়া করলেও জুয়েলকে ধরা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুয়েল আদালতের মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে পাশের মসজিদের কাছ দিয়ে দৌড়ে খড়কি এলাকার দিকে পালিয়ে যান।
উল্লেখ্য, আল আমিন হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর জুয়েল খান ও হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২-এ বিচারাধীন।