আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা পাল্টে দিতে পারেন ভোটের ফল

ইউপি নির্বাচন-২০১৬

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ১২টি ও দৌলতপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৫ বিদ্রোহী প্রার্থী পাল্টে দিতে পারেন ভোটের দলের প্রত্যাশিত ফল। এসব ইউনিয়নের কোনওটিতে দুই থেকে তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এর ফলে দলীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় দলীয় প্রার্থীদের ভোটের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, তৃনমূলের মতামত উপেক্ষা করে মানিকগঞ্জের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে যারা দলীয় মনোনয়ন নিয়েছেন তাদের ভরাডুবি হবে। আর আওয়ামী লীগের সম্মান রক্ষায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেবল। 

এদিকে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য এএম নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও তার ঘনিষ্ট দলীয় লোকজনই বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন। 

হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টিতে নির্বাচন হবে ৩১ মার্চ। দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৯টি ইউনিয়নে দলের ১৩ জন শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। যোগ্য ও ত্যাগী ব্যক্তিদের মনোনয়ন না দেওয়ায় এত বেশিসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় নির্বাচনে ফলাফলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হরিরামপুর উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী হলেন সৈয়দ হাসান ইমাম। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পবিত্র কুমার শাখারী। তিনি বলেন, দলের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হয়নি। এ কারণে উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

বাল্লা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বাচ্চু মিয়া। এখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল ইসলাম হাজারী ও স্বপন কুমার ঘোষ। গোপীনাথপুর ইউনিয়নে দলের মনোনীত প্রার্থী এ জেড এম সফিউল্লাহ। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মাহমুদুল হাসান মোল্লা ও শওকত আলী মোল্লা। গালা ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী রাজিব হাসান। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সালাহউদ্দিন বুলবুল, আবদুল মান্নান ও হামিদুর রহমান শিকদার।

চালা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কাজী আব্দুল মজিদ। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম বিশ্বাস ও সেলিম মোল্লা। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে দলের মনোনীত প্রার্থী কামাল হোসেন। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বজলুর রহমান। হারুকান্দি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী আবদুর রহিম বিশ্বাস ও সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্নু। সুতালড়ি ইউনিয়নে আবদুস সালাম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সেখানে সেকেন্দার আলী বিশ্বাস বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজিমনগর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বিল্লাল হোসেন ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আরব আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

মানিকগঞ্জহারুকান্দি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্ন বলেন,  দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলে করছেন। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান। অথচ তাকে দলের মনোনয়ন না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে সাতটিতে ১১জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে চকমিরপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মোশারফ হোসেন। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক। ধামেশ্বর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইদ্রিস আলী আর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল মজিদ প্রধান ও হারুন কুদ্দুস। কলিয়া ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন একেএম সিদ্দিকুর রহমান। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী  হয়েছেন জাকির হোসেন, আবুল হোসেন ও আব্দুল বাতেন।
বাচামারা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ সরকার । সেখানে বিদ্রোহী  প্রার্থী  হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ।  চরকাটারী ইউনিয়নের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল বারেক ও আইয়ুব আলী। জিয়নপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন  পেয়েছেন  বেলায়েত হোসেন আর বিদ্রোহী প্রার্থী   হয়েছেন ইশারত আলী। বাঘুটিয়া ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন  জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন  তোফাজ্জল হোসেন।

এ ব্যাপারের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন জানান, তৃণমূলের মতামত ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসানো চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মধ্যে অনেকে নির্বাচন থেকে সরে গেছে। যারা এখনও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কারণ সরকারের উন্নয়নের কারণে জনগণ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করবেন।

/এফএস/