জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। এখানকার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ১৪ জন। তারা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্ব স্ব প্রতীকে ভোট চাইছেন। ফলে বিদ্রোহীদের নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা।
সোনারায় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দেয় সৈয়দ বদিরুল আহসানকে। কিন্তু এখানে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উদয় নারায়ণ সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উদয় নারায়ণ সরকার বলেন, একই দলের একাধিক প্রার্থীর কারণে ভোট ভাগাভাগি হবে কিনা জানি না। তবে ইউপি নির্বাচন হয় আঞ্চলিকতার টানে।
বেলকা ইউনিয়নে মজিবর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এখানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হক সরদার এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আশরাফুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দহবন্দ ইউনিয়নে গোলাম কবিরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি শাহজাহান মণ্ডল। রামজীবন ইউনিয়নে সুনীল কুমার বর্মণকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল হুদা স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নে মোখলেছুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রওশন আলম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্রোহী কিনা জানি না। তবে সারাজীবন দলের জন্য কাজ করলাম। দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি। কিন্তু আমার জনপ্রিয়তা আছে। তাই প্রার্থী হয়েছি।
কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পান শফিউল ইসলাম। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল করিম ও দুর্লভ চন্দ্র। শ্রীপুর ইউনিয়নে শহিদুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য জ্যোতিভূষণ বর্মন। চণ্ডিপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মাইদুল ইসলাম ও রাজা প্রামাণিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সুন্দরগঞ্জ জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। ২০১৩ সালের সাঈদীর রায় ঘোষণা ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনায় জামায়াতের সহস্রাধিক নেতাকর্মী আসামি। উপরন্ত এবারই প্রথম দলীয়ভাবে ইউপি নির্বাচন। জামায়াত সেই ক্ষুব্ধতা কাজে লাগাতে পারে। অথচ দল থেকে বিদ্রোহীদের সরাতে শেষ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, আমি নিজেও একজন প্রার্থী। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। বিদ্রোহী প্রার্থী আমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। তবে বিদ্রোহীদের কারণে অন্য ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ওইসব বিদ্রোহীদের সরানোর চেষ্টা করেও কোনও কাজ হয়নি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বস্তিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল হক বলেন, আমি জাতীয় পার্টির ভোটতো পাবো। উপরন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর কারণে ভোট ভাগাভাগি আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট।
/বিটি/টিএন/