বরিশাল এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০২-০৩ অর্থবছরে গৌরনদীর মাহিলাড়ায় সাত কিলোমিটার ভেড়িবাধ সড়কের দু’পাশে সামাজিক বনায়নের আবেদন করে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালে সওজ কর্তৃপক্ষ সমিতির পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সামাজিক বনায়নের চুক্তি করে। চুক্তির পর এলজিইডি’র অর্থায়নে সড়কের দুই পাশে রেইনট্রি, মেহগনি, কড়ই, শিশু, রাজ কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাত হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়।
মাহিলাড়া ইউনিয়ন পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন রাঢ়ী বলেন, ‘সমিতির ৪০৫ জন সদস্য রয়েছেন, যারা এই সামাজিক বনায়নের বড় অংশের মালিক। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর নির্দেশে উপজেলার বিল্বগ্রাম এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের ১৫/২০ জন কর্মী সম্প্রতি বেড়িবাধ সড়কের প্রায় এক হাজার গাছ বিক্রি করে দেন। ইতোমধ্যে ছোট-বড় ৩৮০টি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া উপজেলার শরিফাবাদ, পশ্চিম শরিফাবাদ, মাহিলাড়া, জঙ্গলপট্টি- এই চার গ্রামের আওয়ামী লীগের লোকজন বেড়িবাধ সড়কের প্রায় এক হাজার গাছ বিক্রি করে দেয়। ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ গাছ বিক্রেতাদের কাছ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন আনোয়ার রাঢ়ী।
বিল্বগ্রাম এলাকার মেহেদী হাসান, কহিনুর বেগম, শরিফাবাদ গ্রামের মো. মনির হোসেন, শরিফাবাদ গ্রামের আরিফ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
চেয়ারম্যান পিকলু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আনোয়ার রাঢ়ীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বিরোধ আছে। এ কারণে তিনি আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছেন।’
সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ কর্মী সুকণ্ঠ পাল, রশিদ খান, আ. মান্নান মৃধা, মিজানুর রহমান, নাসির উদ্দিন, মো. লাল মিয়া জানান, পৈতৃক জায়গার ভেতর দিয়ে যাওয়া বেড়িবাধ সড়কের পাশে লাগানো গাছই তারা বিক্রি করেছেন।
গৌরনদী উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মনীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, ‘সড়কের গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কেউই কোনও অভিযোগও করেনি।’
উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম বলেন, ‘কমিটির অনুমোদন ছাড়া সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা অবৈধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একইভাবে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সকালেও ওই নেতা একটি গাছ কেটে নিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ আর ফারুক বখতিয়ার দীর্ঘদিন থেকে গাছ কেটে বিক্রি করছেন। গাছ কাটায় অংশ নেওয়া শ্রমিক আলামিন মোল্লা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা এ আর ফারুক আমাদের গাছ কাটতে বলেছেন।’
উপজেলা বনায়ন কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই গাছটি সরিয়ে ফেলা হয়।’
এ ব্যাপারে এ আর ফারুক বখতিয়ার গাছ কাটার কোনও যুক্তি দিতে পারেননি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী তারিক সালমান বলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
/এআরএল/
আরও পড়ুন: