রাজাকার পুত্রের কাছ থেকে সম্মাননা: ক্ষমা চাইলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার

Pirojpur sangbadপিরোজপুরের জিয়ানগরে বিজয় দিবসে যুদ্ধাপরাধ মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীর কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মাননা নেওয়ায় ক্ষমা চেয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সমীর কুমার দাস বাচ্চু। মঙ্গলবার পিরোজপুর প্রেসক্লাবে জিয়ানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চান।

এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলেন, ‘মাসুদ সাঈদী মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মাননা দিয়েছেন তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে কালিমা লেপন করা হয়েছে।’

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি আরও  বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাও কি ছিল না বিষয়টিতে প্রতিবাদ করার। যেসব মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে জিয়ানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান  লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। 

তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবসে জিয়ানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বাচ্চু, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম মিজানুল হক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বেলায়েত হোসেন ও  আমি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি।  উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা পতাকা উত্তোলন শেষে যখন পায়রা উড়াবেন তখন পেছন থেকে হঠাৎ করে মাসুদ সাঈদী পতাকা মঞ্চে ওঠেন। পরবর্তী মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি কোনও বক্তব্য না দিলেও পুরস্কার বিতরণকালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের পাশে দাঁড়ান এবং পুরস্কার দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মো. মনিরুজ্জামান মনির বাধা দেন। তখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়ে মাসুদ সাঈদী দ্রুত মাঠ ত্যাগ করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আরও  বলেন, ‘মাসুদ সাঈদী তার বাবা দেলাওয়ার সাঈদীর রিভিউ মামলার বিষয়ে সুবিধা পেতেই এ কাজটি করেছেন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের কারও সঙ্গে মাসুদ সাঈদীর আঁতাত রয়েছে।’

মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে সম্পর্ক ও তার কাছে থেকে সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মতিউর জানান, তিনি বা আওয়ামী লীগের কেউ সুবিধা নিচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর জানান, ষড়যন্ত্রের (উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন) মাধ্যমে মাসুদ সাঈদী জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর পতাকা উত্তোলন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা কর্মসূচিতে মাসুদ সাঈদী থাকতে পারবেন না বলে দাবি তুললে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডুর উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের সভায় বিষয়টি নিয়ে রেজুলেশন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জিয়ানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মো. মনিরুজ্জামান মনির, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আ. রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক শাহীন গাজী, সাঈদীর বিরুদ্ধে করা যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী জিয়ানগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মাহাবুবুল আলম  (বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মাসুদ সাঈদীর কাছ থেকে সম্মাননা নিয়েছেন), আরেক সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন নবীন।

প্রসঙ্গত, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জিয়ানগরে মাসুদ সাঈদীর কাছ থেকে সম্মাননা নেন জিয়ানগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্যরা। এ ছাড়া বিজয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন মাসুদ সাঈদী। এ সব অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবি মাসুদ সাঈদী তার ফেসবুকে পোস্ট দেন। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

আরও পড়ুন:
মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে সুসম্পর্ক আওয়ামী লীগ নেতাদের!

/বিটি/