‘ঘুষ না দেওয়ায়’ থানায় ধরে নিয়ে নির্যাতন, এএসআই ক্লোজড

নির্যাতনের শিকার মনির সরদারবরিশালের গৌরনদীতে ঘুষ না দেওয়ায় মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতারের পর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত গৌরনদী থানার এএসআই  মো. মহিউদ্দিনকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার মনির সরদার (২২) গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা গ্রামের মোসলেম সরদারের ছেলে।

মনিরের দুই বোন শিল্পী বেগম ও ইয়াসমিন বেগম অভিযোগ করেন, দেড়মাস আগে তার ভাই কাতার থেকে দেশে ফেরে। মঙ্গলবার (৯ মে) এএসআই  মহিউদ্দিন তার ভাইকে কালকিনি উপজেলার খাসেরহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। পুরনো মিথ্যা মাদক মামলায় ওয়ারেন্ট দেখিয়ে মনিরকে থানায় নিয়ে যান। এরপর দুই লাখ টাকা ঘুষ চান ওই এএসআই।  কিন্তু ঘুষ না দেওয়ায়  ৫শ পিস ইয়াবা দিয়ে আরেকটি নতুন মামলায় আদালতে চালান দেওয়ার হুমকি দিয়ে মনিরকে থানায় নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। নির্যাতনে মনিরের হাত ভেঙে যায়। এরপর গোপনে চিকিৎসা করিয়ে বুধবার আদালতের মাধ্যমে মনিরকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মনিরের বাবা মোসলেম সরদার জানান, তার ছেলে ২০১৪ সালের ৯ মে কাতার চলে যায়। স্থানীয় প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রে ২০১৪ সালের ২০ জুলাই পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার ছেলেকে একটি মাদক মামলায় আসামি করে।

তিনি আরও জানান, দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় মনিরকে থানায় মারধর করেন এএসআই মহিউদ্দিন। এরপর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মনিরকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ওই রাতে মনিরকে জেলা পুলিশ হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা করিয়ে বুধবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয় বলে অভিযোগ করেন মনিরের পরিবারের সদস্যরা।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাহাবুব আলম মির্জা বলেন, পুলিশ  মনির নামে এক রোগীকে মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।  তাকে গণধোলাইয়ের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। মনিরের পিঠে লাঠির আঘাতের দুটি চিহ্ন দেখেছি। তখন মনির তার ডান হাতে ব্যাথার কথা বলেছিল। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এদিকে, আসামি নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী থানার এএসআই মো. মহিউদ্দিন বলেন,‘ মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মনিরকে গ্রেফতার করে আমি থানায় নিয়ে এসেছি। এরপর কী হয়েছে আমি কিছুই জানি না।’

গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, ‘মনিরকে গ্রেফতারের সময় সে পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যাথা পায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মনিরকে বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মনিরের স্বজনদের অভিযোগের কারণে এএসআই মহিউদ্দিনকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।

মনিরের পুরো পরিবারটি মাদক পরিবার হিসেবে পরিচিত। মনিরের বড় ভাই রাসেল সরদারের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও মাদকের ১৪টি মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে।’

/বিএল/