এই চিত্রটি উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর নন্দীপাড়া গ্রামে আবদুর রাজ্জাকের বাড়ির। এক সময়কার সৌদি প্রবাসী রাজ্জাক নিজের বাড়িতেই যে গড়ে তুলেছেন সাপের খামার। তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনও প্রশিক্ষণ না থাকলেও এই খামারে আছে বিষধর কিং কোবরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আড়াইশ সাপ। রাজ্জাক বলছেন, সংশ্লিষ্ট দফতর এ বিষয়ে মনোযোগী হলে সরকারিভাবে সাপের খামার গড়ে তোলা যায়। এর মাধ্যমে দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে সাপের বিষ রফতানিও করা সম্ভব। তিনি নিজে বিষ রফতানির জন্য সরকারি অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।
আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। ওই সময় দেশের অনেক তরুণকেই সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। দেশেই কিভাবে তরুণদের কর্মসংস্থান করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন তিনি। এসময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি সাপের খামারের সন্ধান পান রাজ্জাক। তিনি ওই খামারের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছেই জানতে পারেন সাপের বিষয় রফতানি করে আয়ের সম্ভাবনার কথা। উৎসাহী হয়ে ওঠেন সাপের খামার গড়ার জন্য। সৌদিতে বসেই তিনি যোগাযোগ করেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ইতিবাচক কোনও সাড়া পাননি। পরে নিজে নিজেই খামার গড়ার পরিকল্পনা করেন।
পঙ্খীরাজ, কেউটে, দাড়াশ, বাসুয়া, কালকুলিন, সাদা গোমা, পদ্ম গোমা, বিষঝুড়ি গোরাস প্রভৃতি প্রজাতির সাপ রয়েছে রাজ্জাকের খামারে। খামারের দেখভাল ও সন্ধান মিললে সাপ ধরে আনার জন্য নিয়োগ দিয়েছেন সাত জন শ্রমিক। তবে সাপদের খাওয়ানোর কাজটা নিজেই করে থাকেন তিনি। সপ্তাহে দুই দিন খাবার হিসেবে দেওয়া হয় ব্যাঙ, পাখি, মাছ প্রভৃতি। রাজ্জাক বলেন, ‘বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতেই সাপের পরিচর্যা করা হয়। যেমন— এগুলোকে খেতে দেওয়া হয় রাতে, কারণ সূর্যের আলোয় সাপ ঠিকমতো খেতে পারে না।’
কিং কোবরার প্রতিগ্রাম বিষের দাম প্রায় ১ হাজার মার্কিন ডলার জানিয়ে সাপের খামারের উদ্যোক্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার তরুণদের কর্মসংস্থানের আশায় ১৭ বছর আগে এই খামার গড়ে তুলেছিলাম। এই খামার থেকে মাসে কয়েক কোটি টাকার বিষ সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় বিষ উৎপাদন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে পারছি না। এখন অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছি।’
রাজ্জাক জানান, ২০০৮ সালে সরকার এ বিষয়ে একটি গেজেট প্রকাশ করলে তিনি সাপের খামার পরিচালনা ও বিষ বাজারজাতকরণের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘ওই আবেদনের সঙ্গে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুলিপিও সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু চিঠি চালাচালির পরও অনুমোদন মন্ত্রণালয়েই আটকে আছে।’
পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকতা অজিত কুমার রুদ্র জানান, 'আমাদের দেশে জীববৈচিত্র্যে এমনিতেই হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাই আমাদের সবার উচিত জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। সাপ জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খামারিদের সরকারি নির্দেশনা মেনে সাপ লালন পালন করা উচিত। সাপের খামার স্থাপনে আইনগত নিয়মকানুন যথাযথ হলে লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত হতে পারে।'
আরও পড়ুন-