‘আমার ঠিকানা এই এতিমখানা’

৫৫৫

বরিশাল নগরীর অনেক মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিশুদের মতো লিল্লাহ মাদ্রাসা ও বোডিংয়ের ছাত্রদের ঈদের দিনও বিভিন্ন বাসায় গিয়ে পশু কোরবানি করাসহ চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। নগরীর পলাশপুর ৫ নং ওয়াডের্র ৭ নং আদর্শ গুচ্ছগ্রাম মধ্য-কালভার্ট সংলগ্ন রহমানিয়া কেরাতুল কোরআন হাফিজি ও মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিংটিয়ে শতাধিক শিশু রয়েছে। সোমবার সরেজমিনে মাদ্রারায় গিয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা হয়। তখন শিশু মোহন বলে, ‘আমার বাবা, মা কেউ বেঁচে নেই। শুধু নানু আছেন। তাই আমার ঠিকানা এই এতিম খানা।’

শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের কাছে সব দিনই সমান। ঈদ তাদের জন্য কোনও আনন্দ বয়ে আনে না। তারা সারা বছরের মতো ঈদের দিনও পুরান কাপড় পড়ে কাটায়। সাধারণ খাবার খায়। কোরবানির ঈদে যদিও অনেকের দেওয়া মাংস তারা পায় কিন্তু তা খাওয়ার সময় নেই। কারণ তাদের সকালে ব্যস্ত থাকতে হয় কোরবানি নিয়ে। পরে ব্যস্ত থাকতে হয় চামড়া সংগ্রহ নিয়ে।

ঈদ নিয়ে শিশুরা বলে, ‘আমাদের অনেকের মা নেই, অনেকের বাবা নেই। তাই আমাদের নতুন পোশাক দেওয়ার মত কেউ নেই। আমরা কোনও ঈদেই নতুন পোশাকের মুখ দেখি না। কারণ আমাদের ঈদে নতুন জামা কিনে দেওয়ার মতো আপন জন নেই। খাওয়া-পড়া ও থাকার জন্য ঈদের দিনও হুজুরদের সঙ্গে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়।'

তারা আরও বলে, ‘আমরা কোরবানির ঈদেই একটু মাংস খেতে পারি। তা ছাড়া অন্য সময় মাসে তো দূরের কথা বছরেও দুই এক বার পোলাও মাংস খেতে পারি না। কেউ যদি মাদ্রাসায় খাওয়ায় বা দান করে তা হলে খেতে পারি। তাও দুই এক টুকরা।  তাই আমাদের কাছে সব দিনই সমান।'

মাদ্রাসার পরিচালক ফিরোজী সাহেব জানান, মাদ্রাসার নিজস্ব কোনও জায়গা-জমি নেই। প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। কেউ যদি মাদ্রাসার জন্য ২ শতাংশ জমি দান করতো তা হলে শতাধিক এতিম শিশুর একটি স্থায়ী থাকার জায়গা হতো।

তিনি আরও বলেন, `দ্বীন-দরদী ভাই-বোনদের দেওয়া চাল, কাপড়, নগদ টাকা, যাকাত, ফিৎরা, মান্নত, কোরবানির চামড়ার ও সদকাই এই মাদ্রাসার ও এতিমখানার আয়ের উৎস। এ আয় যথেষ্ট না। এতিম ছাত্রগুলোকে নিয়ে মাদ্রাসাটি চালাতে বেশ কষ্ট হয়। সামর্থবান ও দানশীল ব্যক্তিরা এই মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের মুখের দিকে তাকিয়ে সহযোগীতা করলে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আরও ভালোভাবে করা যেত।'

আরও পড়তে পারেন: এক মাসে হিলি সীমান্ত থেকে মাদকসহ ৬ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার