চার্জশিট দিতেই ১৮ বছর পার!

গোল চিহ্নিত শিশুটি ইরা বরিশালের কাশীপুরে ২০০০ সালে হত্যা করা হয় মোহসেনা ইরা নামের ৫ বছরের একটি শিশুকে। ১৮ বছর পর সোমবার বিকালে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে ইরা হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। বরিশাল দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) এইচ আবদুর রহমান মুকুল। এর আগে আরও ৫ জন এ মামলা তদন্ত করেন। তাদের মধ্যে তিনজন চার্জশিট দিলেও আদালতের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।

আসামিরা হলো, মাসুদুর রহমান মাসুদ, ফরহাদ হোসেন, অলিউল্লাহ হাওলাদার অলি, হারুন জমাদ্দার, নাছিমা বেগম ও মনিরুজ্জামান মনির।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নগরীর কাশীপুরের চহুতপুরে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে ২০০০ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাতে অপহৃত হয় ইরা। ২১ ডিসেম্বর নানার বাড়ির পাশে মোক্তার বাড়ির পুকুর থেকে ইরার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ইরা সদর উপজেলার চরকাউয়া এলাকার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের সহকারী মাস্টার ইকবাল কবির ফরহাদের মেয়ে। ২৭ ডিসেম্বর ইরার বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন।

২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ওসি মুকুলকে ইরা হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও আগের তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যাদি ও দাখিল করা চার্জশিট পর্যালোচনা করেন।

চার্জশিট অনুযায়ী, আলাউদ্দিনের ভাই, বোন, ভগ্নিপতি বিদেশে থাকায় তার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল। এতে আসামি মাসুদের মনে হিংসা জন্মায়। আলাউদ্দিন ও মাসুদ দুজনই বিপরীত ধারার রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। আলাউদ্দিনের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা জাহাঙ্গীরের ভালো সম্পর্ক থাকায় তার আধিপত্য ছিল, যা মাসুদ মেনে নিতে পারছিলেন। এছাড়া আলাউদ্দিনের বাসার সামনে দিয়ে মাসুদ তার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা চওড়া করতে চাইলে বাধা পায়।

এরই মধ্যে মাসুদ এক ঢিলে তিন পাখি মারার মতলবে তার ইটভাটার কর্মচারী হারুন জমাদ্দার, বাসার কর্মচারী অলি, ভাতিজা ফরহাদকে নিয়ে আলাউদ্দিনের মেয়ে জেরিনকে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করে। এছাড়া আলাউদ্দিনের ভাতিজা মনিরুজ্জামান মনিরকেও লোভ দেখিয়ে নিজ দলে ভিড়ায় মাসুদ।

ঘটনার দিন ২০০০ সালের ১৮ ডিসেম্বর আলাউদ্দিনের বাড়িতে ইফতারের অনুষ্ঠান থাকায় বোন ও ভগ্নিপতি, মাসুদসহ তার পরিবার ও বাড়ির লোকজনের দাওয়াত ছিল। ইফতার ও রাতের খাবারের পর রাত ৮টার দিকে ঘরের সামনে ইরা, জেসমিন, স্বর্ণা, টুনি খেলাধুলা করছিল। এ সময় মনির ভুলবশত জেরিনের বদলে ইরাকে মুখ চেপে ইটভাটায় নিয়ে যায়। এরপর ইরাকে মাসুদের বাড়ির একটি অব্যবহৃত কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় এবং তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় থাকে।

এদিকে ইরাকে খুঁজে না পেয়ে তার মামা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। দুদিন পেরিয়ে গেলে ইরার জ্ঞান না ফেরায় মাসুদ, হারুন, অলি ও ফরহাদকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরাকে হত্যা করে তারা। পরে তাকে একটি বস্তায় ভরে অলি ও ফরহাদের সহায়তায় মাসুদের বাগানের পুকুরে ফেলে দেয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।