শেবাচিমের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মার্চ মেডিক্যালের নিচতলায় আটটি বেড নিয়ে এ ইউনিটের চালু করা হয়। প্রথমে এর দায়িত্বে ছিলেন ডা. শাহ আলম মুনির। কিন্তু তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন না করে সার্জারি ইউনিটে সহকারী রেজিস্ট্রার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের প্রভাবখাটিয়ে তিনি সেখানে কাজ করতেন। সপ্তাহ খানেক আগে তাকে গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করা হলে বলেন, 'আমাকে তো বদলি করে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ঘাটায়ে আর কী করবেন।'
ডা. মুনির তার দায়িত্ব পালন না করায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এমএ আজাদ সজলকে বার্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়। গত চার বছর ধরে আট চিকিৎসকের দায়িত্ব একাই পালন করছেন তিনি। চিকিৎসক না থাকায় তিনি সেখানে দায়িত্বরত চারজন ব্রাদারকে রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসার দেওয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন। তারা হলেন, ব্রাদার লিংকন দত্ত, সাইফুল ইসলাম, আতিকুর রহমান ও কাদের খান। ডা. সজল অনুপস্থিত থাকলে তারাই রোগীদের চিকিৎসা দেন। এরপরও প্রয়োজন হলে ডা. সজলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সেবা দেন। এ চারজন ব্রাদার দিনরাত রোগীদের সেবা করছেন।
মেডিক্যালের প্রশাসনিক দফতর সূত্র থেকে জানা গেছে, ডা. এমএ আজাদ সজলের দায়িত্ব হচ্ছে সপ্তাহে ২ দিন বার্ন ইউনিটে রাউন্ড দেওয়াসহ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া। এছাড়া সপ্তাহে একদিন অপারেশন করবেন। এরপরও তাকে এমবিবিএস ক্লাস নিতে হয়। কিন্তু বার্ন ইউনিটে ডা. সজল ছাড়া কোনও চিকিৎসক না থাকায় তিনি দিনরাত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। একইভাবে এমবিবিএস ক্লাসও নিচ্ছেন। রোগী এলে তাকে কল দেওয়া হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বার্ন ইউনিটে এসে চিকিৎসা দেন।
বর্তমানে বার্ন ইউনিটে অর্ধ শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা থেকে ওই ইউনিটে রোগী আসে। প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ জন রোগী ভর্তি হয় সেখানে।
ব্রাদার ইনচার্জ লিংকন দত্ত বলেন, ‘চিকিৎসক সংকট থাকায় রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা আমাদেরই দিতে হয়। এতে বিভিন্ন সময় রোগীর সেবা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তাই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’
সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.সজল বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমি একাই চিকিৎসক। কর্মস্থল ঢাকা হলেও শেবাচিম হাসপাতালে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’
চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে শেবাচিমের হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘আসলে এর কোনও অরগানোগ্রাম নেই। আমি জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছি। চিকিৎসক দেওয়ার জন্য আমি মন্ত্রণালয়কে বলেছি। আমার সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব এখানে চিকিৎসক দেওয়া হবে।’ ডা. মুনিরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
গত এক বছরে বার্ন ইউনিটে এক হাজার ৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ৯১২ জন। মারা যান ১৫ জন। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য ২৩১ রোগী ঢাকায় পাঠানো হয়। মাইনর অপারেশন হয়েছে তিন হাজার ৬৫০ জনের। আর বছরে ঝুঁকিপূর্ণ ৫১ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়।